বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সমন্বয় সভার আয়োজন করা হয়।
নিউজ বাংলা প্রতিবেদন: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচনের সময়ে গুজব বন্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ, সাংবাদিকদের ভোট কক্ষের ভেতরের ছবি তোলা ও ভিডিও না করার পক্ষে প্রস্তাবনা দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
গুজব বন্ধে ভোটের আগে ও পরে ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে ফোর জি থেকে টু জিতে নামিয়ে আনারও পরামর্শ দিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সমন্বয় সভায় উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে এসব সুপারিশসহ আরো অনেক ধরনের সুপারিশ করা হয়েছে বলে বৈঠকের একাধিক সূত্র জানিয়েছেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, নির্বাচনের সময় দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ওপর বিশেষ নজর রাখা যাতে বিশেষ কোনো গোষ্ঠী পর্যবেক্ষণের আড়ালে অপপ্রচার চালাতে না পারে। অথবা কোনো পর্যবেক্ষক যেন কোনো দলের পক্ষ নিয়ে কাজ করতে না পারে। নির্বাচনের দিন সাংবাদিকদের ভোট কেন্দ্রে প্রবেশের বিষয়েও কড়াকড়ি আরোপের ওপর জোর দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তা ছাড়াও ভোট চলার সময় কেন্দ্রের গোপন কক্ষে সাংবাদিকরা যেন ছবি না তুলতে পারে, ভিডিও করতে না পারে এবং সরাসরি সম্প্রচার করতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্যও অনুরোধ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
বৈঠক সূত্র আরো জানায়, শুধু ভোট কেন্দ্র নয়, ভোট কেন্দ্রের ৪০০ গজের ভেতরে গণমাধ্যম কর্মীরা যাতে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে না পারেন সেসব বিষয় নিয়েও সুপারিশ করেছেন তারা।
সূত্র আরো জানায়, সভায় নির্বাচনে কালো টাকার ব্যবহার বন্ধে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ করার প্রস্তাব দেওয়া হয। এই প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি দেওয়া হয় নির্বাচনের সময়ে বিদেশ থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা আসতে পারে। এসব টাকা নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে। সেই টাকা নির্বাচনে অবৈধভাবে ব্যবহার করা হবে বলেও কমিশনের কাছে প্রস্তাব দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়াও রোহিঙ্গা বিষয়ে আলোচনা হয় সভায়। রোহিঙ্গারা নির্বাচনে প্রভাবিত হতে পারে। সেজন্য বিশেষ নজরদারি বাড়াতে হবে বলেও মত দেন তারা।
সূত্র আরো জানায়, বৈধ অস্ত্রধারী শুধু প্রার্থীর নিরাপত্তার স্বার্থে নিজের কাছে রাখতে পারবেন। তবে তা ব্যবহার করতে পারবেন না। ভোটের এক সপ্তাহ আগে বৈধ সব অস্ত্র (প্রার্থী ব্যতীত) জমা দিতে হবে বলেও একজন পুলিশ সুপার সুপারিশ করেন।
সূত্র আরো জানায়, সেনাবাহিনীর মোতায়েনের বিষয়ে সভায় দুই ধরনের বক্তব্য উঠে এসেছে। ইসির পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ২৪ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত ছিল। সভায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি পক্ষের দাবি, সেনা মোতায়নের সময়কাল ৯ দিনের চেয়ে বাড়ানো হোক। অপর একটি পক্ষের দাবি, সেনাবাহিনী মোতায়েনের সময় কমিয়ে বরং বিজিবিকে আরো আগে মাঠে নামানো হোক।
বৈঠক সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে প্রশ্ন তুলে বলেন, ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ) আসনের প্রার্থী খোন্দকার আবু আশফাককে আপনার কেন গ্রেপ্তার করেছেন? তাঁর নামে অভিযোগ থাকলে এতদিন কি করেছেন? তখন কেন করেননি? আমি রিটার্নিং কর্মকর্তাকে ফোন করে জানতে চাইলাম, তাঁকে কেন গ্রেপ্তার করা হয়েছে? রিটার্নিং কর্মকর্তা আমাকে বললেন, তিনি নাকি কিছু জানেই না! জেনে জানাবেন। এটা কোনো কথা? একজন প্রার্থীকে গ্রেপ্তার করা হবে অথচ তিনি জানবেন না?
কবিতা খানম সভায় আরো বলেন, আগামী ২০ ডিসেম্বরের পর পরিস্থিতি আরো বেশি খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ওই সময়টাতে আপনাদের অধিক ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, ফৌজদারি অপরাধ আর আচরণবিধি এক নয়। আপনাদের ছোট্ট একটা ভুলের কারণে অনেক কিছু ঘটে যেতে পারে।
সূত্র আরো জানায়, নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে বলেন, সাংবাদিকরা কেন্দ্রে যাবেন। তাদের একটি নীতিমালা আছে, সেটি তারা মেনে কেন্দ্রে প্রবেশ করবেন। এখানে ইসির কিছু করার নেই। এছাড়াও ফেসবুক নিয়ন্ত্রণ করা খুব ঝামেলার। এখানে আমার কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে সেসব বিষয় আপনাদের মাথায় রাখতে হবে।
নির্বাচন কমিশনের একটি সূত্র জানায়, এরই মধ্যে ইন্টারনেটের গতি ফোর জি থেকে টু জিতে কমিয়ে আনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। যদিও তা এখনো চূড়ান্ত করেনি। এছাড়াও আজকের সভায় আলোচনা হয়েছে এমন সব বিষয় নিয়ে ইসি কমিশন সভায় আলোচনা করবে। কমিশন সভার আলোচনায় যে সিদ্ধান্ত হবে তা পরিপত্র আকারে জারি করবে ইসি।
বৃহস্পতিবার রাতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আগামী ২৪ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত সেনাবাহিনী ভোটের মাঠে থাকবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। রাতে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবনের নিজ কার্যালয়ে সচিব এই মন্তব্য করেন।
হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, আগামী ২৪ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত ভোটের মাঠে সেনাবাহিনী থাকবে। তারা মাঠে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে। মোট ১০ দিন মাঠে থাকবে।
ভোটের মাঠে বিজিবি কবে থেকে নামবে এমন প্রশ্নে ইসি সচিব বলেন, বিজিবির মাঠে নামা নিয়ে আমরা প্রস্তাব রেখেছি আগামী ২২ ডিসেম্বর থেকে। তবে কমিশনের কেউ কেউ বলছেন ২০ ডিসেম্বর, কেউ আবার বলেছেন ১৫ ডিসেম্বর থেকে। আসলে বিজিবি কবে থেকে মাঠে নামবে তা আগামী শনিবার ঠিক করবে কমিশন।
আজকের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বৈঠকে কেউ কেউ সুপারিশ করেছেন মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে। আপনাদের ভাবনা কী—এমন প্রশ্নে হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, এখানে আসলে নিয়ন্ত্রণ বলা যাবে না। তারা যেটা বলেছেন কার্ড ছাড়া যেন কোনো সাংবাদিক ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ না করে। কারণ হচ্ছে অনেকগুলো অনলাইন পত্রিকা আছে, যারা ভুয়া। তারা যেন কেন্দ্রে প্রবেশ করার সুযোগ না পায়। সেই বিষয়ে তারা মত দিয়েছেন। কারণ তারা (ভুয়া সাংবাদিক) যে ভোট কেন্দ্রে ঢুকে ব্যালট পেপার ছিনতাই করবে না এমনটা তো বলা যাবে না।
ভোটের আগে পরে ইন্টারনেটের গতি ফোর জি থেকে টু জিতে নামিয়ে আনার ব্যাপারে পুলিশ ইসির প্রতি সুপারিশ করেছেন- এমন প্রশ্নে ইসি সচিব বলেন, তারা এই বিষয়ে প্রস্তাবনা দিয়েছেন। তবে আমাদের পক্ষ থেকে এই ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। আমাদের কোনো চিন্তা-ভাবনাও নেই আপাতত।
জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে নিবন্ধিত দলের প্রার্থীরা নিজ দলের প্রধানের বাইরে পোস্টারে অন্য কারো ছবি ব্যবহার করতে পারবে কি না-এমন প্রশ্নে হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, এটা আইনগত বিষয়। তবে নিবন্ধিত দলগুলো তাদের দলীয় প্রধানের ছবি ব্যবহার করতে পারবেন। যেমন, নাগরিক ঐক্য ইসির নিবন্ধিত দল নয়। সুতরাং দলটি যার ব্যানারে নির্বাচন করবে সেই দলের প্রধানের ছবি ব্যবহার করতে পারবেন। গণফোরামের প্রধান কিন্তু ড. কামাল হোসেন। তার মানে গণফোরাম চাইলেও খালেদা জিয়ার ছবি ব্যবহার করতে পারবে না।