মোস্তফা ফিরোজ :
ডাকসুর ভিপি নুরের উপরে হামলার সাফাই গাইতে গিয়ে কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছেন, সে কেন ভারতের বিষয়ে কথা বলতে যায়। এটা তার কাজ না। কি তাজ্জব কথা! নুরু কি সরকারি চাকরি করে যে সে বলতে পারবে না? আর এটা কেমন কথা! নুরু ভারত কেন সারা বিশ্ব নিয়ে কথা বলতে পারে। এটা যেকোন ব্যক্তির বলার অধিকার রাখেন। আপনি পারছেন না সেটা আপনার সমস্যা। আপনার বলতে না পারার সমস্যা আমার উপরে চাপাচ্ছেন কেন? ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যখন নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পেশ করেন তখন কি তিনি বাংলাদেশকে হিন্দু নিপীড়নের দায়ে অভিযুক্ত করেননি? তিনিতো সরকারি মন্ত্রী, তাও বলেছেন। আমাদের মন্ত্রীরা সেটা চুপচাপ হজম করেছেন। অবশ্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী একটু সংযত থেকে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন।
আমরা পাকিস্তানের বিষয়ে সোচ্চার থাকি। কারণ, পাকিস্তান অন্যায় করেছে। কিন্তু ভারতে এখন যা হচ্ছে তাতে সেই দেশেই হিন্দু মুসলিম সবাই মিলে যেমন প্রতিবাদ করছে, জাতিসংঘ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও তাতে সাড়া দিচ্ছে। সেটা স্বাভাবিক ঘটনা। বিশ্বে জঙ্গীরা যখন হামলা চালায়, মানুষ মারে তখন কি আমরা নীরব থাকি? থাকি না। সরব হওয়াটাই মানবিকতা। বঙ্গবন্ধু তার জীবদ্দশায় ফিলিস্তিন সহ বিশ্বের শোষিত নির্যাতিত মানুষের পক্ষে সব সময় সরব ছিলেন। তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সেই ধারা বজায় রেখেছেন। তাহলে নুরু বা অন্য কেউ যদি আজ ভারতের ধর্মীয় বিভেদ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী নাগরিকত্ব বিলকে কেন্দ্র করে আন্দোলনরত মানুষের পক্ষে কথা বললে দোষটা কোথায়? নাকি ভারত ছাড়া সারা বিশ্ব নিয়ে কথা বলার নিয়ম রয়েছে? তাছাড়া, এটা কেবল এখন ভারতের অভ্যন্তরীন বিষয় নয়, এর দ্বারা আমাদেরও ঝুঁকির ভিতরে পড়ে যাবার আশঙ্কা রয়েছে। এই প্রেক্ষিতে যারা এই অঞ্চলকে ধর্মীয় বহুত্ববাদ ও অসাম্প্রদায়িক হিসাবে গড়ে তুলতে চায় তাদের সরব হওয়াইতো স্বাভাবিক। বরং কেউ কেউ মুখে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বা ৭২ সংবিধানের কথা বলছে, অথচ এই কঠিন পরিস্থিতিতে তারা অস্বাভাবিক রকমের নীরব ভূমিকা পালন করছেন। বা বলা যায় মুখে কলুপ এঁটেছেন। কেন যেন তারা ভারতের সাম্প্রতিক নানা প্রসঙ্গে খামোশ হয়ে আছেন। এই ধরনের লেজুড়বৃত্তির মনোভাব পরিহার করে সত্যিকার দেশপ্রেমিক হওয়া প্রয়োজন।
নুরু তার সীমিত সাধ্য দিয়ে যে কাজগুলো করছে, সেটা বড়ো রাজনৈতিক দলগুলোর করা উচিৎ ছিলো। কিন্তু সেটা না করে উল্টো নুরুকে দোষারোপ করা হচ্ছে। এটা দুঃখ ও দুর্ভাগ্যজনক।
লেখক : মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও সিনিয়র সাংবাদিক
সূত্র: লেখকের ফেসবুক থেকে সংগৃহীত