ফাহমিদা আহমেদ:
কদিন ধরেই শরীরটা খারাপ যাচ্ছিলো। রাত হলেই জ্বর আসে। সাথে বমির উদ্বেগ। ভেবেছিলাম ভাইরাল ফিবার। ডাক্তার দেখালাম। ডাক্তার করোনা টেষ্ট করতে দিলেন। টেষ্ট রিপোর্ট সিভিয়ার করোনা পজিটিভ। মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো! স্বামী বেচারার মুখে চিন্তার ছাপ। বাচ্চা দুটোর ও মন খারাপ। কালক্ষেপন না করে ৪ মার্চ ভর্তি হয়ে গেলাম পিজি হাসপাতালে। ভাগ্য ভালো যে অনেক কষ্টে একটা কেবিন পাওয়া গেলো। শুরু হলো আমার দুঃখের সাতকাহন। অক্সিজেন সেচুরেশন ৮০-৮২ তে নেমে এলো। শরীরের রক্ত ক্রমশঃ জমাট বাধতে শুরু করলো। সার্বক্ষনিক মুখে লাগিয়ে দেয়া হলো অক্সিজেন মাস্ক। এমন অবস্হা হলো যে একটা সেকেন্ড ও অক্সিজেন ছাড়া নিঃশ্বাস নিতে পারতাম না। রক্ত তরল করার জন্য সারাদিনব্যপী শরীরে পুশ করা হোত নানা ধরনের ষ্টেরয়েড এন্টিবায়োটিক সহ গোটা দশেক ইনজেকশন। পেটে দেয়া হোত আরো এক বিশেষ ধরনের ইনজেকশন। কি প্রচন্ড সেই ব্যথা!! ব্যথায় ব্যথায় পুরো শরীরটা আমার কুঁকড়ে যেত। ইনজেকশনে পুরো শরীরটা নীল হয়ে গিয়েছিল। মনে হোত এই বুঝি আমার ভবলীলা সাঙ্গ হলো। কেবলই মনে হোত আমার মেয়ে দুটো বুঝি মাতৃহীনই হয়ে গেল। আমার কেবিনের বারান্দার কার্ণিশ ঘেষে একটা বুলবুলি পাখি বাসা বেধেছিল। মা পাখিটা সারাদিন মুখ ভরে খাবার নিয়ে ছানা পাখি দুটোকে খাওয়াতো। আহা! জগৎকূলের সব মা জাতি বুঝি এমনি। সন্তান স্নেহে অন্ধ। এ সব দেখতাম আার নীরবে অশ্রু বিসর্জন দিতাম, আর ভাবতাম আমি কি আর পারব আমার সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিতে? হাসপাতালে প্রতিদিনই বাড়তে থাকল লাশের সারি। আমার পাশের কেবিনের সুস্হ রোগীটা যখন মারা গেলো তখন ভাবলাম বুঝি আমার ও আর বাচার আশা নেই। এ সময় দিন রাত এক করে শুয়ে শুয়ে শুধু আল্লাহকে ডেকেছি। আল্লাহ সব পারেন। তিনি আমাকে যমের ঘর থেকে ফিরিয়ে এনেছেন। আল্লাহর অশেষ কৃপা আমার মায়ের দোয়া ও দেশ-বিদেশের আত্মীয় স্বজন, বন্ধু, কলিগ, শুভাকাঙ্ক্ষী,শ্বশুরবাড়ি, বাবারবাড়ীর সবার দোয়ায় আমি ধীরে ধীরে সুস্হ হয়ে উঠলাম। আমার ছোট্ট মেয়ে দুটো দিন রাত এক করে আমার সেবা করেছে। আমার স্বামী, দেবর ও আমার একমাত্র ছোট ভাই এর প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। কৃতজ্ঞ তাদের প্রতি ও যারা আমার অসুস্হতার সময় আমার খোজখবর নিয়ে আমার জন্য দোয়া করেছেন। টানা ২১ দিন হাসপাতালে থাকার পর গত ২৫ মার্চ বাসায় ফিরেছি। করোনা যেন আমার শরীরটাকে পুরো ক্ষয় করে ফেলেছে। এখনো শরীর ভীষন দুর্বল। বাকী জীবনটা যেন সুস্হ ভাবে বেঁচে থাকতে পারি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here