নিউজবাংলা ডেস্ক:

করোনায় ব্যবসার নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় রফতানি ঋণের শর্ত শিথিলের চার দিনের মধ্যে নতুন করে কঠিন শর্ত দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন থেকে প্রাক জাহাজীকরণ ঋণ পেতে এলসি, রফতানির আদেশ ও চুক্তিপত্রের শর্তানুযায়ী পণ্য রফতানি হবে মর্মে গ্রাহককে ব্যাংকে অঙ্গীকারনামা দিতে হবে। এছাড়া গ্রাহকের হালনাগাদ সিআইবি প্রতিবেদন, বকেয়া রফতানি বিলের তথ্য ও আন্তর্জাতিক সংস্থা স্বীকৃত কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রেডিট রেটিং রিপোর্ট দিতে হবে।

প্রাক জাহাজীকরণ ঋণের নতুন সার্কুলারে আগের শিথিল করা বিষয়গুলো বহাল রাখা হয়েছে। তবে এতে নতুন করে আরও কিছু শর্ত আরোপ করা হয়েছে। আবার কিছু খাতে শর্ত শিথিল করা হয়েছে। সার্কুলারে একটি শর্ত শিথিল করে বলা হয়, এই ঋণ বিতরণের পরের সপ্তাহের মধ্যে পুনঃঅর্থায়নের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করতে হবে। আগে ছিল যে সপ্তাহে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ওই সপ্তাহেই আবেদন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আবেদনের সীমা বাড়ানোর ফলে ব্যাংকগুলো বাড়তি সময় পেল। ফলে তারা ধীরে সুস্থে আবেদন করতে পারবে।

সার্কুলারে আরও কিছু নতুন শর্ত আরোপ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে- প্রাক জাহাজীকরণ ঋণ পেতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে গ্রাহকের হালনাগাদ সিআইবি রিপোর্ট, গ্রাহকের নামে কোনো বকেয়া রফতানি বিল আছে কিনা সে তথ্য এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক স্বীকৃত কোনো সংস্থা থেকে ক্রেডিট রিপোর্ট সংগ্রহ করে জমা নিতে হবে। আগে এসব শর্ত ছিল না।

এতে আরও বলা হয়, প্রতিটি দফায় রফতানির এলসির বিপরীতে ব্যাক টু ব্যাক এলসির মাধ্যমে কাঁচামাল সংগ্রহ করতে হবে এবং কাঁচামালের মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করে অর্থায়ন করতে হবে। রফতানির পণ্যের কাঁচামাল সংগ্রহ থেকে শুরু করে পণ্য জাহাজীকরণের আগ পর্যন্ত সব পর্যায়ের কার্যক্রম ব্যাংকগুলোতে তদারকি করতে হবে।

উল্লেখ্য, রফতানি খাতে কম সুদে ঋণ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক পাঁচ হাজার কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করে গত ১৩ এপ্রিল একটি সার্কুলার জারি করে। এ তহবিল থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ঋণ দেবে ৩ শতাংশ সুদে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো রফতানিকারকদের দেবে ৬ শতাংশ সুদে।

ইডিএফের শর্ত শিথিল : করোনাভাইরাসে অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের রফতানি উন্নয়ন তহবিল (এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড বা ইডিএফ) থেকে ঋণ নেয়ার শর্ত শিথিল করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন দুই বছরের ওভারডিউ থাকলেও অর্থাৎ রফতানিমূল্য প্রত্যাবাসন না হলেও ইডিএফের ঋণ সুবিধা পাবেন রফতানিকারকরা। এতদিন কোনো প্রতিষ্ঠানের বকেয়া (ওভারডিউ) থাকলে ইডিএফ থেকে ঋণ সুবিধা দেয়া হতো না। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা ও নীতি বিভাগ এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা জানান, বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সৃষ্ট পরিস্থিতিতে লকডাউনে বন্ধ ছিল ব্যবসা। অচল হয়ে পড়েছে বিশ্ব বাণিজ্য। এতে করে অনেক প্রতিষ্ঠান পণ্য রফতানি করলেও সময়মতো মূল্য পায়নি। এমন অবস্থায় বিশ্ব বাজারে রফতানিমুখী শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে শর্ত শিথিল করা হয়েছে। এতদিন কোনো রফতানিমূল্যের প্রত্যাবাসন না হলে ইডিএফ থেকে ঋণ দেয়া হতো না। নতুন নির্দেশনায় ৭২০ দিন অর্থাৎ দুই বছর পর্যন্ত ওভারডিউ থাকলে ঋণ সুবিধা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নির্দেশনা ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।

এর আগে গত ২৩ জুলাই এক নির্দেশনায় করোনার প্রাদুর্ভাবে দেশের ক্ষতিগ্রস্ত রফতানিকারকদের জন্য ঘোষিত নীতিসহায়তার মেয়াদ আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

নীতিসহায়তার মধ্যে রফতানির অর্থ দেশে আনা ও আমদানি দায় পরিশোধের মেয়াদ ৬০ দিন করে বাড়ানো হয়েছে। ব্যাক টু ব্যাক এলসির আওতায় স্বল্পমেয়াদি সাপ্লায়ার্স ও বায়ারার্স ক্রেডিটের মেয়াদ বাড়ানো হয় ১৮০ দিন। রফতানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে নেয়া ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ৯০ দিন বাড়ানো হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here