নিউজ বাংলা ডেস্ক:
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শঙ্কা মুক্ত নন, এমনটাই জানিয়েছেন হাসপাতালটির কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান।
বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক আহসান জানান, ” চোখ খুলছেন, কথা বলছেন। কিন্তু ক্রিটিকাল স্টেজে বলো এখনো। উনি পা নাড়াচ্ছেন। চেষ্টা করছেন কথাবার্তার।”
একই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়া বলেছেন ভিন্ন কথা।
এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন হাসপাতালে মি: কাদেরকে দেখতে আসেন, তখন কি তিনি মিটমিট করে তাকিয়ে ছিলেন?
এর উত্তরে অধ্যাপক বড়ুয়া বলেন, ” মিটমিট করে তাকানো না, তখন মিটমিট করতেছিলেন, চোখের পাতাটা নড়তেছিল। যখন ডাকতেছিলেন তখন ব্লিংকিং হচ্ছিল। আর মহামান্য রাষ্ট্রপতি যখন আসলেন, তখন তিনি চোখ বড় করে তাকালেন। আমাদের প্রাক্তন মন্ত্রী মহোদয়, মোহাম্মদ নাসিম যখন ডাকলেন, তখনও উনি চোখ খুলে তাকালেন।”
মি: কাদের এখন যে অবস্থায় আছেন, সেটি যদি আরো কিছুক্ষন স্থিতিশীল থাকে তাহলে চিকিৎসকরা দুই রকমের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
অধ্যাপক আহসান বলেন, হয়তো মেডিকেল থেরাপির দিকে যেতে পারেন নয়তো বাইপাস সার্জারীর দিকেও তারা যেতে পারেন। তবে এ সিদ্ধান্ত সময়ের সাপেক্ষে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
“এজন্য আমি সবসময় বলি যে ২৪ ঘন্টা থেকে ৭২ ঘন্টা না গেলে অবস্থা বলা যাবে না। এখনো উনি ক্রিটিকাল অবস্থায় আছেন।”
এখন উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় বলে জানানো হয়েছে।
অধ্যাপক আহসান বলেন, এ অবস্থায় মি: কাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠালে তাঁর স্থিতিশীল পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে।
তিনি বলেন, যারা এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে নিতে আসবে তারা যদি মনে করে সেখানে সব ধনের প্রযুক্তিগত সুবিধা আছে, তাহলে চাইলে তারা নিতে পারে।
মি. কাদেরের হৃদপিণ্ডের মূল ধমনীতে ৯৯ শতাংশ ব্লক ছিল, বলছেন তার চিকিৎসক।
অধ্যাপক আহসান দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, “যেটার জন্য ওনার এ প্রবেলমটা হয়েছে আমরা শুধু সেটাকেই সারিয়েছি। কিন্তু সেটা মনে হয় পর্যাপ্ত নয়।”
“যেহেতু তিনটা নালী দরকার হয়, সবগুলোই সারানো দরকার। কিন্তু এ মুহূর্তে সেগুলো সারানো যাবে না।সরাতে গেলে আরো বিপদ ঘটবে।”
তিনি বলেন, “পরিস্থিতি এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। এখন যদি বলেন যে এখন পাঠানো (বিদেশে পাঠানো) যাবে কি না, আমি বলবো যে না। এখন পাঠানো যাচ্ছে না। ”
এর আগে তথ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হাসান মাহমুদ হাসপাতালে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মি: কাদেরকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
মি: কাদের এখন বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন। তাকে ৭২ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে রেখেছেন চিকিৎসকরা।
ওবায়দুল কাদেরকে যে কারণে হাসপাতালে আনা হয়
ভোরে শ্বাসকষ্ট শুরু হবার পর তাকে দ্রুত শাহবাগের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আনা হয়।
সেখানে আনার পর তার শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি হয় বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। তখন তাকে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়।
হাসপাতালে আনার পর এনজিওগ্রাম করে চিকিৎসকরা তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক চিহ্নিত করেন।
হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান মি. আহসান সকালে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ওবায়দুল কাদেরের অবস্থা স্থিতিশীল হলেও তিনি পুরোপুরি শঙ্কা মুক্ত নন।
তিনি বলেন, “ওনার এনজিওগ্রাম করা হয়েছে। এনজিওগ্রামে দেখা গেছে তিনটা নালী ব্লক। একটা নালী খুলে দিছি।”
“এখন মোটামুটি উনি স্টেবল (স্থিতিশীল) আছে। স্ট্যাবল থাকলেও বলা যাবেনা যে স্ট্যাবল। এটা যে কোন মুহূর্তে আনস্টেবল (অস্থিতিশীল) হয়ে যেতে পারে। এবং হয়ে যেতেও পারে।”
হাসপাতালের ‘আইসিইউতে হার্ট অ্যাটাক’ হয় কাদেরের
এদিকে দুপুরে ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থা নিয়ে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া সংবাদ সম্মেলন করেন।
এ সময় আওয়ামী লীগের সিনিয়র কয়েকজন নেতা সেখানে উপস্থিতি ছিলেন।
অধ্যাপক বড়ুয়া বলেন, “ওনার একটু শ্বাসকষ্ট হয়েছিল। এই শ্বাস কষ্ট নিয়ে আমাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে উনি সকাল পৌনে আটটায় আসেন।”
“আমরা আইসিইউতে নিয়ে যাই। আইসিইউতি চিকিৎসা দিতে দিতেই ওনার একটা হার্ট অ্যাটাক হয়। সে হার্ট অ্যাটাকের জন্য কোথায় কী হলো না হলো সেটা দেখার জন্য এনজিওগ্রাম করা হয়।”
“এরপর একটা স্ট্যান্টিং করে দেয়া হয়। তার পরবর্তীতে উনি এখন স্ট্যাবল (স্থিতিশীল)।”
আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, মি: কাদেরের হৃদরোগের কোন ইতিহাস নেই।
মি: কাদের ২০১৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২০ তম জাতীয় সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।