নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনের সামনে আজ সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। ছবি : সংগৃহীত

জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিবারই নিজ নিজ নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করে রাজনৈতিক দলগুলো। জানায়, আসছে পাঁচ বছরে তারা জনগণের জন্যে কী কী করতে চায়।

কিন্তু এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজেদের চাওয়াগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জানালেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। সোমবার ‘তারুণ্যের ইশতেহার ভাবনা-২০১৮’ শীর্ষক ইশতেহারটি তাঁরা আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, জাতীয় পার্টি, গণফোরাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও নাগরিক ঐক্যের নেতাদের কাছে হস্তান্তর করেন।

এর আগে বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে দাবিগুলো উত্থাপন করে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশের মোট ১০ কোটি ৪৪ লাখ ভোটারের মধ্যে ৪ কোটি ২০ লাখ তরুণ। অর্থাৎ, মোট ভোটারের শতকরা ৪০ ভাগ। তাই, নির্বাচনে জয়ী হলে তারুণ্যের ইশতেহারে উল্লেখিত দাবিগুলো বাস্তবায়ন করার আহ্বান জানানো হয়।

তারুণ্যের পাঁচ দফা ইশতেহারে যা রয়েছে,

বেকারত্ব নিরসনে কর্মসংস্থান

প্রথম দাবি, বেকারত্ব নিরসনে কর্মসংস্থান। এই দফার দাবিগুলো হলো, শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন শেষে যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মের নিশ্চয়তা প্রদান, বেকার তরুণদের সহজ শর্তে ন্যূনতম ৫ লাখ টাকার ‍ঋণ প্রদান,  ঘুষ, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক বিবেচনার বাইরে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা, প্রশাসনিক কাজের ভোগান্তি কমাতে ‘One Desk service’ চালু করা।

চাকরির নিয়োগ ব্যবস্থা

দ্বিতীয় দফায় রয়েছে, চাকরির নিয়োগ ব্যবস্থা। এর দাবিগুলো হলো, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে কোটা প্রথার সংস্কার, চাকরির আবেদন সম্পূর্ণ ফ্রি করা, প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার ১০ দিনের মধ্যে ও লিখিত পরীক্ষার ৯০ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করা। এছাড়া, মৌখিক পরীক্ষার নম্বর কমিয়ে সর্বোচ্চ ৫০ নম্বর নির্ধারণ করা, তথ্য যাচাইয়ের নামে হয়রানি বন্ধ করা, বেসরকারি চাকরি আইন প্রণয়ন ও তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক নিয়োগ পরীক্ষা পদ্ধতির প্রণয়ন।

তাছাড়া, বড় নিয়োগ পরীক্ষাগুলো সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মতো  বিভাগীয় শহরগুলোতে নেওয়ার ব্যবস্থা করা। সরকারি কর্ম কমিশনের কর্মক্ষমতা বাড়াতে জনবল বৃদ্ধি করে সরকারি সব চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা পিএসসির নিয়ন্ত্রণে আনা। প্রয়োজনে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে আলাদা বোর্ড গঠন করা। সরকারি চাকরি আইনের আলোকে ‘বেসরকারি চাকরি আইন’ প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা।

শিক্ষা ও গবেষণা

এই দফায় বলা হয়েছে, শিক্ষাখাতে বার্ষিক বাজেটের ২০ শতাংশ বরাদ্দ রাখা, বার্ষিক বাজেটের মোট বরাদ্দের শতকরা ১০ ভাগ গবেষণা খাতে অবশ্যই রাখার ব্যবস্থা করা, শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া, প্রশ্ন ফাঁসবিরোধী সেল গঠন ও আইন প্রণয়ন করা, শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধে কঠোর আইন করা এবং মেধাপাচার রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

এ ছাড়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধ করা ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে ক্যাটাগরি অনুযায়ী সরকারি শিক্ষা ব্যয় ফি নির্ধারণ করার কথা বলা হয়েছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষক

চতুর্থ দফায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষক সংক্রান্ত বিষয়গুলোর কথা বলা হয়েছে। এতে রয়েছে, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা, আবাসনের কৃত্রিম সংকট দূর করা, বিশেষ করে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা, সিট বাণিজ্য বন্ধ করে আবাসিক হলগুলোকে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট বাজেটের ১০ শতাংশ গবেষণা খাতে বরাদ্দ দেওয়া, এর মধ্যে ছয় ভাগ শিক্ষক ও চার ভাগ শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ রাখা।

এ ছাড়া শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে একাডেমিক ফলাফল, গবেষণা‌ বা পিএইচডি ডিগ্রি ছাড়া নিয়োগ না করা, আবাসিক হলগুলোর খাবারের মান বৃদ্ধি ও মাদকমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ার কথা বলা হয়েছে।

যুব অ্যাসেম্বলি

এ পর্যায়ে বলা হয়েছে, যুব সমাজকে গণতান্ত্রিক পরিবেশে উন্নত নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার সুযোগ দিতে প্রতি বছর যুব অ্যাসেম্বলির আয়োজন করার উদ্যোগ নিতে হবে। যুব অ্যাসেম্বলিতে প্রতিনিধিত্ব করবে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত ছাত্র সংসদের সদস্যরা।

বিবিধ

সভা সমাবেশ, বাক স্বাধীনতা ও সংগঠন করার সাংবিধানিক অধিকারে কোনোরূপ হস্তক্ষেপ না করা, গণতান্ত্রিক আন্দোলন করলে হামলা মামলা থেকে রাষ্ট্রকে বিরত রাখা, এবং যারা হামলা করবে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য যথোপযুক্ত আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা এবং তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। গণমাধ্যমের কাজকে সংকুচিত করে এবং নাগরিকের বাকস্বাধীনতাকে হরণ করে এমন সব আইন বাতিল করা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন। এ সময় আরো বক্তব্য দেন যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন, নুরুল হক নূর, ফারুক হাসান। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক মোল্লা বিন আমিন, জসিম, মশিউর রহমানসহ শতাধিক শিক্ষার্থী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here