আহাদ-উজ-জামান: Rumour is a pipe blown by surmises, jealousis conjectures…. (William Shakespeare)
‘জনরব’ যার যথার্থ প্রতিশব্দ হতে পারে ‘গুজব’। গুজব একটি প্রচলিত বাংলা শব্দ। তিন বর্ণের এই শব্দটির ব্যঞ্জনা কখনো কখনো হয়ে ওঠে অপ্রতিরোধ্য। মার্ক টোয়েন একবার বলেছিলেন, “সত্য তার জুতার ফিতে বাঁধতে বাঁধতে ‘গুজব বা মিথ্যে’ সমস্ত পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে আসতে সক্ষম।” আমাদের কবি সাহিত্যিকেরাও গুজব নিয়ে অল্পবিস্তর লিখেছেন। গুজব নিয়ে কবি শামসুর রাহমানের ‘পণ্ডশ্রম’ও একটি বহুল পঠিত কবিতা:
“এই নিয়েছে ওই নিলো যাঃ! কান নিয়েছে চিলে,
চিলের পিছে মরছি ঘুরে আমরা সবাই মিলে।
কানের খোঁজে ছুটছি মাঠে, কাটছি সাঁতার বিলে,
আকাশ থেকে চিলটাকে আজ ফেলব পেড়ে ঢিলে।”
বহুকাল আগে থেকেই নানা কারণে গুজব ছড়িয়েছে মহামারি আকারে। সমাজের সুযোগসন্ধানী, অসৎ ও মন্দ লোকেদের দ্বারা গুজবের বিস্তার ঘটে। ক্ষেত্রবিশেষে অতি উৎসাহ বা কোনো বিশেষ সুবিধা নেওয়ার উদ্দেশ্যে গুজব রটানো হয়। বস্তুত, সুস্পষ্ট ও অবাধ তথ্যের প্রবাহ যখন বাধাগ্রস্ত হয় তখন গুজব মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তবে অতীতের তুলনায় বর্তমানে গুজবের বিস্তার তড়িৎ গতিতে হয়। কারণ হিসেবে এ দায় যায় প্রযুক্তির ওপরই। প্রযুক্তির এই উৎকর্ষের সময়কালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিস্তার ও প্রভাবের কারণে গুজব ছড়াচ্ছে চকিতে। ‘শেয়ার’ বা ‘পোস্ট’ করতে যতটুকু সময় প্রয়োজন গুজব ছড়াতেও ততটুকু সময়ের প্রয়োজন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া যেকোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই-বাছাই ছাড়াই তা ছড়িয়ে পড়ছে আমাদের দৈনন্দিন জীবন ও সমাজে। এরূপ যাচাই-বাছাইহীন তথ্যের ছড়াছড়িতে সামাজিক অস্থিরতা বাড়ছে মহামারি আকারে। এই সকল গুজবের ফলে ব্যক্তিবিশেষ থেকে কালেভদ্রে রাষ্ট্রকেও চড়া দাম দিতে হয়। ফলে রাষ্ট্র, সমাজ ও বিচারব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ‘এমআইটি’র তিনজন গবেষক গুজব ছড়ানোর বিষয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন। গবেষণা থেকে জানা গেছে কী কী কারণে একটি নেতিবাচক বিষয় হলেও তা মানুষের কাছে দ্রুত গ্রহণযোগ্যতা পায়। কারণগুলো হলো- অনিশ্চিত পরিস্থিতি, উদ্বেগ, ভুল বা বিভ্রান্তিকর সরস তথ্য, অস্পষ্টতা ও সামাজিক অবস্থান। তবে প্রতিটি সমস্যারই সমাধান করা সম্ভব হয় সময়োপযোগী ও বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে। রাষ্ট্রের যেমন তার জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা আছে তেমনি জনগণের দায়িত্বশীল আচরণই পারে একটি সুস্থ-সুন্দর ও নিরাপদ সামাজিক বলয় তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে। প্রতিটি ঘটনার তথ্য সুনিপুণভাবে যাচাই-বাছাই করে তবেই সেটার প্রকাশ ঘটানো একটি সচেতন নাগরিক শৃঙ্খলার পরিচায়ক। একটি ভুল বার্তা বয়ে আনতে পারে অপরিসীম দুর্দশা। Joseph Corerad বলেছেন, “Gossip is what no one claims to like – but everybody enjoys.”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here