নিউজবাংলা ডেস্ক:

অনেক স্বপ্ন নিয়ে ৫৫টি মেহগনিগাছ লাগিয়েছিলেন রাজশাহীর বাগমারার ভবানীগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক আবদুল গাফফার। এসএসসি পাস করার পর ২০০৬ সালে গাছগুলো লাগিয়েছিলেন তিনি। ভেবেছিলেন, গাছগুলো বড় হলে বিক্রি করে ভালো কাজ করবেন অথবা গাছ বিক্রির টাকা দিয়ে ব্যবসা করবেন। গাছগুলো বড় হতে শুরু করেছিল ঠিকই, তবে স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। এর আগেই সেগুলো কেটে সাবাড় করে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার রাতে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি।

থানায় দেওয়া লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স্কুলশিক্ষক আবদুল গাফফারের বাবা ইয়াকুব আলীর কেনা ১২ শতাংশ জমিতে ২০০৬ সালে ৫৫টি মেহগনিগাছের চারা লাগানো হয়। গাছগুলো বড় হয়ে উঠছিল। লেখাপড়া শেষে আবদুল গাফফার উপজেলা সদরের ভবানীগঞ্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে পাঠদান করে আসছিলেন। পাশাপাশি প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন চাকরির জন্য। এ কারণে তিনি উপজেলা সদরেই অবস্থান করছিলেন।

গতকাল আবদুল গাফফার ঝিকড়া ইউনিয়নের ঝাড়গ্রামে গিয়ে জানতে পারেন, তাঁর লাগানো মেহগনিগাছগুলো কেটে ফেলে জায়গাটি দখল করে নেওয়া হয়েছে। খবর পেয়ে বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় ৫০টি ছোট–বড় গাছ কেটে ফেলে জায়গাটি বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘেরা অবস্থায় দেখেন তিনি। পরে জানতে পারেন, ওই এলাকার আবদুল লতিফসহ কয়েকজন ব্যক্তি গত রোববার ভোরে গাছগুলো কেটে ফেলেন। তাঁরা বেশ কিছু গাছের ডালপালা সেখানে রেখে এবং মোটা কিছু অংশ নিয়ে চলে যান। পাশাপাশি ওই জমিতে কিছু আমের চারা লাগিয়ে এর চারপাশে বাঁশ দিয়ে ঘিরে তা দখলে নেন।

আবদুল লতিফ মুঠোফোনে ২০ থেকে ২৫টি গাছ কেটে জমি দখলে নেওয়ার অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, তাঁরা ওই জমির কিছু অংশের অংশীদার। তবে আগে বিষয়টি জানতেন না। জানার পর তাঁদের (স্কুলশিক্ষক ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের) গাছ কেটে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। তাঁরা গাছগুলো না কাটায় নিজেরাই (আবদুল লতিফ ও তাঁর লোকজন) সেগুলো কেটে নিয়েছেন। অংশীদারত্বের কাগজপত্র থাকলে তাঁরা কেন আইনের আশ্রয় না নিয়ে নিজেরাই পুরো জমির গাছ কেটে ফেললেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারাই (প্রতিপক্ষ) অবৈধভাবে জমি দখল করে ছিল। তবে বড় কয়েকটি গাছ এখনো কাটেননি বলেও জানান।

এ বিষয়ে স্কুলশিক্ষকের বাবা ইয়াকুব আলী জানান, জমিটি কেনার পর কিছু অংশ (৫ শতাংশ) স্থানীয় একটি নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দান করেছেন। বাকি অংশে গাছ লাগিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তা নিজের দখলে রেখেছেন। হঠাৎ করে আবদুল লতিফ ওই জমির অংশীদার বলে দাবি করেন। তবে এর সপক্ষে কোনো কাগজপত্রও দেখাতে পারেননি। মেহগনিগাছ লাগানো ওই জমি থেকে তাঁদের বাড়ি দূরে হওয়ায় আবদুল লতিফ অন্যায়ভাবে গাছ কেটে জমি দখলে নিয়েছেন।

বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান স্কুলশিক্ষকের লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, একজন কর্মকর্তাকে তদন্ত করে গাছ কেটে স্কুলশিক্ষকের জমি দখলে নেওয়ার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here