আবদুর রহমান মল্লিক
‘পাখির কণ্ঠে আপনি জাগাও আনন্দ, তুমি ফুলের বক্ষে ভরিয়া দাও সুগন্ধ’। প্রকৃতির দুটে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ ফুল ও পাখি। ভোরের পাখির ক‚জনে আমাদের আমাদের আরামের ঘুম ভাঙ্গে জীবনের প্রয়োজনে আমরা কর্মব্যস্ত হই। ঘুম থেকে উঠলেই চোখে পড়ে বাহারি ফুল। এই ফুল আমাদেও মনোজগতে বিশাল অংশ জুড়ে আছে। ফুলের গন্ধ ও সৌন্দর্যে আমরা বিমোহিত হই। ফুলের সৌন্দর্য যার চোখে পড়ে না তার নাকি মনুষ্যত্ব নেই। তাই শিল্পীর কন্ঠে ধ্বনিত হতে শুনেছি-ফুল যে ভালো বাসে না লোকে বলে সে নাকি মানুষ খুন করতে পারে।
গোলাপ, রজনীগন্ধা, গন্ধরাজ, চামেলি, শিউলি কিংবা বকুলের মতো ফুল হিসেবে স্বীকৃত নয় সরিষা ফুল। সরিষা ফুল একটি গুরুত্বপূর্ণ তৈল জাতীয় ফসলের আগমনী জানায় মাত্র। তবুও বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি মাঠ যখন একযোগে শোভিত হয় হলুদ সরিষা ফুলে তখন আমাদের কৃষক ভাইদের সঙ্গে আমরা সকলেই এক ধরনের পুলক অনুভব করি। প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্যে আমরা নিজেকে হারিয়ে ফেলি। মনের আনন্দ প্রকাশে সরিষা খেতের পাশে কিংবা মাঝে দাঁড়িয়ে ছবি তুৃলি। বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করি।
এমন সৌন্দর্যে আত্মহারা হয়ে কবিগুরু তাই বলেছেন , মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে/ মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই। একইভাবে হৃদয় মথিত করে জীবনানন্দ দাশ বলেছেন, বাংলা মুখ আমি দেখিয়াছি তাই পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর। প্রকৃতির কাছে, সৃষ্টিকর্তার কাছে আমরা অবনত হই। মনের অজান্তেই উচ্চারণ করি-অনেক তোমার খেয়েছি গো অনেক নিয়েছি মা ব তবু জানি নে- যে কী কী বা তোমার দিয়েছি মা। প্রকৃতির রূপ-রস-গন্ধ-স্পর্শ আমরা নিয়েই যাচ্ছি, প্রকৃতি মায়ের মতো অকাতরে দিয়ে যাচ্ছে বলে। কেউ কেউ মৃত্যুও পর আবার ফিরে আসতে চান এই পৃথিবীতে। মানুষ হয়ে যদি নাও পারে, শঙ্খচীল কিংবা শালিক হয়ে হলেও যেন আসতে পারে।
হে প্রকৃতি, তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি শত রূপে শত বার, জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার। সরিষার হলুদ ফুল আমাদের মনে রঙ ছড়িয়ে দিক। যাতে আমার মানুষে মানুষে প্রীতির সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারি। একটি ফুল যেমন আরেকটি ফুলকে ছোট করে দেখে না, হিংসে নিন্দে করেনা । আমরা যেন ফুলের মতোই ছড়াতে পারি ভালাবাসা ও প্রীতির সৌরভ। একটি গোলাপ কখনও বলে না আমি গরীবের উঠানো বাঁচতে পারবো না। যে তাকে ভালোবাসে তাকেই সে সর্বস্ব বিলায়। ভেতরের সৌন্দর্য আর ভালোবাসার শক্তি যা পারে অন্যকিছু তা পারে না। প্রকৃতির কাছ থেকে যে শিক্ষা নিতে পারি তাতে কোনো ভ্রান্তি নেই। প্রকৃতি চায় আমাদের তারই অংশ করে নিতে,তারই মতো গৌরবান্বিত করতে। জীবনটাকে সার্থক করতে।
গূণীজনতো এমনি এমনি বলেন নি, ‘পুষ্প আপনার জন্য ফোটে না পরের জন্য তোমার হৃদয় কুসুমকে প্রস্ফুটিত কর’। জীবন সাধনা হয়ে উঠুক হৃদয় কুসুমকে প্রস্ফুটিত করার।

 

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here