নিউজবাংলাডেস্ক: মোসা. সামছুন্নাহার আক্তার। ডাক নাম পিংকি। বয়স ২০ বছর। ২০১৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছে। মুঠোফোনে পরিচয় ফার্নিচার মিস্ত্রি মুক্তারের (২৪) সঙ্গে। পরে কঠিন প্রেম। এরপর পরিণয়। শেষ পরিণতি প্রেমিকের মিথ্যা তথ্যের প্রতিবাদে পিংকির আত্মহত্যা। গতকাল আত্মহত্যার প্ররোচনায় মৃত পিংকির চাচা আব্দুন নূর বাদী হয়ে স্বামী মুক্তারসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
তবে পিংকির স্বজনরা বলছে, মামলায় আমাদের মতামতকে উপেক্ষা করা হয়েছে। পিংকির বাড়ি হবিগঞ্জ সদরে আর মুক্তারের বাড়ি সরাইলের বেপারী পাড়ায়। গত রোববার মুক্তারের বড় ভাইয়ের শ্বশুরালয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে পিংকি। স্বামী মুক্তারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সরাইল বেপারী পাড়ার নছর মিয়ার ছেলে মুক্তার। দীর্ঘদিন ধরে হবিগঞ্জ সদরে ফার্নিচারে নকশা তৈরির কাজ করছে। ৪ বছর পূর্বে বিয়ে করেছে সে। তার রয়েছে মাহিন (২ বছর ৬ মাস) নামের ১টি ছেলে সন্তান। মুক্তারের সঙ্গে মুঠোফোনে পরিচয় হয় কলেজছাত্রী বনগ্রাম গ্রামের আব্দুস ছালামের মেয়ে পিংকির। মুক্তার স্ত্রী সন্তানের বিষয়টি গোপন করে নিজেকে ভার্জিন হিসেবে উপস্থাপন করে পিংকির কাছে। পিংকি মন উজার করে ভালোবেসে ফেলে মুক্তারকে। এক সময় তাদের প্রেম পরিণয়ে রূপ নেয়। গত শনিবার ভোরে গোপনে প্রেমিক মুক্তারের সঙ্গে পালিয়ে আসে পিংকি। সন্দেহ হওয়ায় পথিমধ্যে তাদের আটকে দেয় সেখানকার লোকজন। তবে, নোটারি পাবলিক কার্যালয়ের কাগজে বিয়ের প্রমাণ দেখিয়ে রক্ষা পায়। সেখানে তাদের বিয়ের মোহরানা লেখা আছে ৫ লাখ টাকা। মুক্তার পিংকিকে নিজের বাড়িতে নেয়নি। তার বড় ভাই নজরুল ইসলামের শ্বশুরালয় বড্ডাপাড়া গ্রামের প্রয়াত আব্দুল মালেকের বাড়িতে রাখে। গত রোববার সকালে পিংকি জানতে পারে মুক্তার বিবাহিত। নিজ চোখে মুক্তারের ছেলে মাহিনকে দেখতে পায়। এরপর পিংকি যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে। অবশেষে গত রোববার সকাল ১১টার দিকে নিজের গলায় ওড়না পেঁচিয়ে সিলিংফ্যানে বেঁধে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করে পিংকি। তড়িঘড়ি করে পিংকিকে সরাইল হাসপাতালে নিয়ে যায় স্বামী মুক্তার। কর্তব্যরত চিকিৎসক পিংকিকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ হাসপাতাল থেকে পিংকির লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। পুলিশ মুক্তারকে প্রথমে আটক ও পরে গ্রেপ্তার করে। গতকাল দুপুরে পিংকির চাচা আব্দুন নূর বাদী হয়ে মুক্তার হোসেন (২৪), তার বড় ভাই আক্তার হোসেন (২৬) ও ভাবী মুন্নি বেগমকে (২৪) আসামি করে মামলা করেছেন। অজ্ঞাতনামা আসামি রয়েছে আরো ৩-৪ জন। তবে পিংকির চাচা মো. কবির হোসেন ও আব্দুন নূর বলেন, তথ্য গোপন করে পিংকির সঙ্গে প্রেম করেছিল মুক্তার। মুক্তার ফুসলিয়ে পিংকিকে বাড়ি থেকে বের করে নিয়েছে। মুক্তারের স্ত্রী সন্তানের খবর জেনে ক্ষোভে লজ্জায় ও দুঃখে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে পিংকি। পিংকির মৃত্যুর জন্য মুক্তার, তার পরিবারের অন্য সদস্যরা ও তাদেরকে আশ্রয়দাতারাই দায়ী। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সরাইল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মঞ্জুর আহমেদ বলেন, প্রথম বিয়ের বিষয় গোপন করে প্রেম করেছে মুক্তার। পিংকিও বিশ্বাস করেছিল মনেপ্রাণে। মুক্তারের বাড়িতে এসে সব জেনে হতবিহবল হয়ে পড়ে পিংকি। পরে মনের দুঃখে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে।