ঢাকা: করদাতা ও সেবাগ্রহীতাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে শেষ হল সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলা-২০১৮। আয়কর মেলার শেষদিন সোমবার ঢাকার বেইলী রোডস্থ অফিসার্স ক্লাবসহ সারাদেশে ৪৫টি স্পটে মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মেলার শেষদিনও ছিল করদাতা-সেবাগ্রহীতাদের উপচেপড়া ভিড়। এ দিন রাজস্ব আয় হয়েছে ৫৬৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। মেলায় মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে দুই হাজার ৪৬৮ কোটি ৯৪ লাখ ৪০ হাজার ৮৯৫ টাকা। মেলার শেষদিন করদাতা থাকা পর্যন্ত মেলায় সেবা দেওয়া হয়। আয়কর মেলা শেষ হলেও ২২ থেকে ৩০ নভেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত সকল কর অফিসে মেলার পরিবেশে মেলার মতই সকল কর সেবা প্রদান করা হবে এবং করদাতারা রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সৃজনশীল, উদ্ভাবনীমূলক উদ্যোগ ও করদাতা-সেবার উজ্জ্বলতম নিদর্শন হল আয়কর মেলা। আয়করের মতো কঠিন বিষয়কে নিয়ে মেলার আয়োজন করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কেবল চমক সৃষ্টিই করেনি, বরং জনসেবার ক্ষেত্রে নতুন উদাহরণ তৈরি করেছে। ২০১০ সাল থেকে শুরু হওয়া আয়কর মেলার পরিধি এবং মেলার মাধ্যমে আয়কর বিভাগের সেবার পরিসর উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৩-১৯ নভেম্বর রাজধানী ঢাকাসহ সকল বিভাগীয় শহরে ৭ দিন, ৫৬ টি জেলা শহরে ৪ দিন, ৩২ টি উপজেলায় ২ দিন এবং ৭০ টি উপজেলায় ১ দিনব্যাপী আয়কর মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কর আহরণের পাশাপাশি সামাজিক ন্যায় বিচার ও সমতা নিশ্চিত করাই কর বিভাগের প্রধান কাজ। এ ধারাবাহিকতায় ‘উন্নয়ন ও উত্তরণ, আয়করের অর্জন’- স্লোগানকে সামনে রেখে এ বছর আয়কর মেলার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘আয়কর প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে সামাজিক ন্যায়বিচার ও ধারাবাহিক উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ’।

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, নবম আয়কর মেলায় ২ হাজার ৪৬৮ কোটি ৯৪ লাখ ৪০ হাজার টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। গত বছর এর পরিমাণ ছিল ২৫১ কোটি ৬১ লাখ ২৬ হাজার ৬৭৪ টাকা বেশি। সে হিসাবে এবারের মেলায় রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ১১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। মেলায় রিটার্ন দাখিল করেছেন ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৫৭৩ জন করদাতা। গত বছরের চেয়ে এবার ১ লাখ ৫২ হাজার ৮৬টি বেশি রিটার্ন জমা পড়েছে। সে হিসাবে রিটার্ন দাখিলে প্রবৃদ্ধি ৪৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

এদিকে এবারের মেলায় ই-টিআইএন নিয়েছেন ৩৯ হাজার ৭৪৩ জন। এ সংখ্যা গত বছরের চেয়ে প্রায় ১০ হাজার বেশি। নিবন্ধন নেয়ার প্রবৃদ্ধি ৩৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে এবারের মেলায় সেবা নিয়েছেন ১৬ লাখ ৩৬ হাজার ২৬৬ জন করদাতা। সেবা গ্রহীতায় প্রবৃদ্ধি প্রায় ৪০ শতাংশ।

এছাড়া এবারের মেলায় অনলাইনে রিটার্ন জমা দিয়েছেন ৩ হাজার ৭৭০ জন করদাতা। আর ই-পেমেন্টে ১ হাজার ১৬০ জন করদাতা ১ কোটি ৪৮ হাজার ৬৫৮ টাকার কর জমা দিয়েছেন। এনবিআর বলছে, সব মিলিয়ে সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলা ঘিরে সারাদেশের করদাতাদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে। ছিল উৎসবমুখর পরিবেশও।

আয়কর মেলার শেষদিন আয়কর মেলা পরিদর্শন করেন এনবিআর এর সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল করিম, ড. মোহাম্মাদ আব্দুল মজিদ এবং ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ। এসময় এনবিআর এর বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, এনডিসি অতিথিদের নিয়ে মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন এবং করদাতা ও সেবাগ্রহীতাদের সাথে কুশলাদি বিনিময় করেন।

অনলাইন আয়কর রিটার্ন দাখিল ও ই- পেমেন্ট: এবছর আয়কর মেলয় বিশেষ আকর্ষণ ছিল অনলাইন আয়কর রিটার্ন দাখিল। এবার সারাদেশে অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করেছেন ৩ হাজার ৭৭০ জন করদাতা এবং ই- পেমেন্টের মাধ্যমে ১ হাজার ১৬০ জন করদাতা ১ কোটি ৪৮ হাজার ৬৮৫ টাকা আয়কর প্রদান করেছেন।

ভবিষ্যৎ করদাতা সৃষ্টি ও শিক্ষার্থীদের কর বিষয়ে সচেতন করার লক্ষে মেলায় তৃতীয়বারের মতো সংযোজিত হওয়া কর শিক্ষণ ফোরামের আওতায় শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন মেলা পরিদর্শন, কর বিষয়ে ধারণা লাভ, কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। এতে শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতের যোগ্য নাগরিক হওয়া ও নেতৃত্ব লাভের শিক্ষা নেন। কর শিক্ষণ ফোরামে এবার ঐতিহ্যবাহী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ রাজধানীর খ্যাতনামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। শিক্ষার্থীরা মেলা পরিদর্শন এবং কর বিষয়ে জ্ঞান লাভ করেন। পরে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতায় প্রতিদিন ১০ জন করে শিক্ষার্থীকে সনদপত্র, পুরস্কার ও প্রাইজবন্ড প্রদান করা হয়। অংশগ্রহণকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেও সনদপত্র প্রদান করা হয়। মেলার শেষ দিন নর্থ সাউদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

যে কোন মেলায় যেমন থাকে নানাবিধ পসরার সমাহার, তেমনি আয়কর মেলাকে সজ্জিত করা হয় কর প্রদানে উৎসাহী করদাতাদের জন্য নানারূপ সেবার আয়োজন দিয়ে; যেমন, ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন, আয়কর রিটার্ন ফরম পূরণ, রিটার্ন গ্রহণ, কর পরিশোধ, মুক্তিযোদ্ধা, মহিলা, প্রতিবন্ধী ও প্রবীণ করদাতাদের জন্য ১টি করে পৃথক বুথ, প্রতিটি কর অঞ্চলের জন্য আলাদা বুথ, করদাতাদের সুবিধার্থে হেল্প ডেস্ক, তথ্য কেন্দ্র ও আয়কর অধিক্ষেত্র সংক্রান্ত বুথ ইত্যাদি। মেলায় করদাতাদের সুবিধার্থে ৪৩টি আয়কর রিটার্ন বুথ, ৩১টি হেল্প ডেস্ক, ব্যাংক বুথ (সোনালী ব্যাংক ১৩টি, জনতা ব্যাংক ৫টি এবং বেসিক ব্যাংক ৩টি), ই-পেমেন্টের জন্য ৩টি,ই-ফাইলিং এর জন্য ২টি পৃথক বুথ ছিল। এছাড়াও মেলায় আগত সম্মানিত করদাতাদের তাৎক্ষণিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের জন্য একটি মেডিকেল বুথের ব্যবস্থা ছিল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here