নিউজবাংলা ডেস্ক :
সংসদে না বুঝেই ‘না’ ভোট দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। বেসরকারি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব প্রত্যাহারের বিষয়টি বুঝতে না পেরে প্রথমে ‘না’ ভোট দেন সরকারি দলের এমপিরা। অথচ তাদের ‘হ্যাঁ’ ভোট দেয়ার কথা ছিল। বিষয়টি স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বুঝতে পেরে তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে আবার ভোট নেন। দ্বিতীয় দফায় অধিকাংশ সদস্য ‘হ্যাঁ’ ভোট দেন। এর মধ্যদিয়ে সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরীর একটি বেসরকারি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব পাস হতে গিয়ে হলো না।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে এই ঘটনা ঘটে। তামাকজাত দ্রব্যের ওপর প্রচলিত অ্যাড–ভেলোরাম (স্তরভিত্তিক মূল্যের শতকরা হার) পদ্ধতির পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট করারোপ করার দাবি জানিয়ে বেসরকারি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব এনেছিলেন সরকারি দলের সাংসদ সাবের হোসেন চৌধুরী। সংশোধনী দিয়ে তার এই প্রস্তাবে সমর্থন জানান আরও ৯ জন সংসদ সদস্য।
সাবের হোসেন চৌধুরী তার প্রস্তাবের পক্ষে বলেন, ‘বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রতিবছর এক লাখ ৬১ হাজার মানুষ অকালে মৃত্যুবরণ করেন। প্রায় ১৫ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হন। প্রায় ৬১ হাজার শিশু পরোক্ষ ধূমপানের কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। ২০১৭–১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা, যা একই সময়ে তামাকখাত থেকে অর্জিত রাজস্ব আয়ের চেয়ে বেশি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে দেশে তামাকের যে কর–কাঠামো তা অত্যন্ত জটিল, পুরনো ও অকার্যকর। বিশ্বের মাত্র ছয়টি দেশে এভাবে করারোপ করা হয়। অন্যদিকে, ফিলিপাইন, নেপাল, শ্রীলংকা, অস্ট্রেলিয়াসহ অধিকাংশ দেশে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি চালু আছে। এটি করা হলে রাজস্ব আয় বাড়বে।’
জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘বর্তমান আইনে তামাকপণ্যে সুনির্দিষ্ট করারোপের সুযোগ নেই। চলমান বাজেটে স্তরভিত্তিক শুল্কারোপ করা হয়েছে। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে এবং গ্রাহকের ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে ক্রমান্বয়ে সুনির্দিষ্ট করারোপ পদ্ধতি চালু করার বিষয়টি পরীক্ষা–নিরীক্ষা করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে হয়তো একদিন এটি হবে।’
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণত সরকারি দলের সাংসদেরা তাদের সিদ্ধান্ত প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেন। কিন্তু সাবের হোসেন চৌধুরী তার প্রস্তাব প্রত্যাহার করতে রাজি হননি। তখন নিয়ম অনুযায়ী তার প্রস্তাবটি প্রত্যাহারের জন্য কণ্ঠভোটে দেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
সাবের হোসেন চৌধুরীর প্রস্তাবে বলা হয়, সংসদের অভিমত এই যে, সকল প্রকার তামাকজাত দ্রব্যের ওপর প্রচলিত ‘অ্যাড–ভেলোরাম’ পদ্ধতির পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট করারোপ করা হউক। স্পিকার ভোটে বলেন, ‘সাবের হোসেন চৌধুরীর এই প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করা হোক, যারা এর পক্ষে আছেন তারা ‘হ্যা’ বলুন। তখন খুব কমসংখ্যক সদস্য ‘হ্যাঁ’ বলেন। এরপর স্পিকার বলেন, যারা এর বিপক্ষে আছেন তারা ‘না’ বলুন। অধিকাংশ সদস্য ‘না’ বলেন। অর্থাৎ অধিকাংশ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরীর প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দিয়ে দেন। এ সময় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে হাসতে দেখা যায়।
পরে তিনি বলেন, ‘আমি আবার সব সদস্যের মনোযোগ আকর্ষণ করছি।’তখন তিনি প্রস্তাবটি আবার পড়ে শোনান এবং দ্বিতীয় দফা ভোট নেন। দ্বিতীয় দফায় ‘হ্যাঁ’ ভোট জয়ী হয়। এতে সাবের হোসেন চৌধুরীর প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যাত হয়।
এর পরে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘এখানে প্রায় সবাই তামাকের ওপর করারোপরে পক্ষে বাজেটের আগে সমর্থন করলেও আজ ভোটে তারাই সরকারের পক্ষে যাবেন না বলে আমার প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। আমার প্রস্তাবে সরকারের রাজস্ব বাড়বে। অথচ যারা আগে এ প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন করেছিলেন, তারা প্রস্তাবটি নাকচ করার পক্ষে ভোট দিয়েছেন। কিন্তু এখানে একবার পক্ষে সম্মতি, আবার সংসদে বিপক্ষে ভোট, এমন নজির সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য সঠিক নয়।’ কণ্ঠভোটে সাবের হোসের চৌধুরীর সিদ্ধান্ত প্রস্তাবটি নাকচ হয়ে যায়।
এরপরে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘আজ যারা বিপক্ষে ভোট দিলেন, তারা সরকারের বিরোধিতা করবেন না বলে বিপক্ষে ভোট দিলেন। কিন্তু এটি তো সরকার পতনের বা জাতীয় স্বার্থে ভোট নয়, এটি শুধুমাত্র একটি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব। তবে এখানেও যদি সরকারকে সমর্থন করতে তাদের পক্ষে ভোট দিতে হবে, তাহলে তা নিশ্চয় সংসদে একটি খারাপ নজির হয়ে থাকবে।’
পরে স্পিকার বলেন, ‘২৯৪ বিধি অনুযায়ী বলা আছে, স্পিকার কর্তৃক কোনো প্রস্তাব ভোটে নাকচ হয়ে গেলে তা নিয়ে কোনো সদস্য আর কোন বক্তব্য দিতে পারবেন না। এখানে তারপরেও আমি আপনাদের কথা শুনেছি। এ প্রস্তাবে আমি কোনো পক্ষপাতিত্ব করিনি। প্রথমবার ভোটে আমি নিজে কিছুটা কনফিউসড ছিলাম বলে দ্বিতীয়বার আবারও প্রস্তাবটি ভোটে দিয়েছি। এটাতে আমার কিছু করার থাকে না। সংসদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’