নিউজবাংলা :

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে। হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন এক রোগীকে কেন্দ্র করে ডাক্তারদের প্রতি রোগীর স্বজনের অসন্তোষ প্রকাশ, ডাক্তারে ভিডিও ধারণ, ডাক্তারকে থাপ্পড়, উত্তেজিত ডাক্তারের রোগীর স্বজনের মোবাইল ভাংচুর, অন্যান্য ডাক্তারদের ছুটে এসে তিন তরুণীকে (রোগীর স্বজন) হাসপাতালের কক্ষে দুই ঘণ্টারও বেশি আটকে রেখে শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে।

আহত অবস্থায় তিন তরুণীকে পুলিশ উদ্ধার করেছে। রোগীকে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা না দিয়ে বের করে দেয়া হয়! তবে এ ঘটনায় দায়ী চিকিৎসক নাকি রোগীর স্বজন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিভিন্ন সূত্রে অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, মঙ্গলবার মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা এক নারী রোগী ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ভর্তি হন। ভর্তির পর থেকেই নারীর তিন মেয়েসহ একদল মেয়ে বিভিন্ন সময় ওয়ার্ডে এসে ডাক্তার ও নার্সদের ডেকে তাদের মায়ের চিকিৎসা সঠিকভাবে হচ্ছে না বলে অভিযোগ এনে খারাপ ব্যবহার করে। গতকাল ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ইয়াসমিন নামে এক নার্সকে থাপ্পড়ও মারে। এ সময় চিকিৎসকরা এসে তাদের শান্ত করেন।

একটি সূত্র জানায়,  বিকেলে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগীর তিন মেয়েসহ কয়েকজন মেয়ে এসে কর্তব্যরত চিকিৎসককে তার কক্ষে গিয়ে তার মায়ের কাছে আসতে অনুরোধ জানায়। কিন্তু একাধিকবার ডাকার পরও ডাক্তার না আসায় তারা মোবাইল ফোনে ওই ডাক্তারের ডিউটি ফেলে মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকার ভিডিও করেন। এ সময় ভিডিও কেন করা হলো কৈফিয়ত চাইলে কথা কাটাকাটি শুরু হয়।

তরুণীদের একজন ডাক্তারকে থাপ্পড় মারলে ডাক্তারের হইচই শুনে নার্সসহ অন্যান্য স্টাফরা এসে তাদের আটকে ফেলেন। উত্তেজিত স্টাফরা তাদের চড় থাপ্পড় মারেন। এ সময় তারা ভবিষ্যতে আর এ কাজ করবে না বলে সাদা কাগজে মুচলেকা দিয়ে চলে যান।

ঘণ্টাখানেক পর তারা কয়েকজন তরুণকে সাথে নিয়ে হাসপাতালে প্রবেশ করে একজন ডাক্তার ও কয়েকজন নার্সকে মারতে মারতে হাসপাতালের প্রবেশ গেট পর্যন্ত নিয়ে যান। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে হাসপাতালের ইন্টার্নসহ চিকিৎসক, নার্স ও ওয়ার্ডবয়সহ অন্যান্য স্টাফরা ছুটে এসে তরুণদের ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়।

এ সময় রোগীর তিন মেয়েকে আটক করে হাসপাতালের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শী একজন জানান, তিন তরুণীকে তিনটি রুমে নিয়ে যান চিকিৎসকরা। এ সময় তরুণীদের চিৎকার ও কান্নায় হাসপাতাল ভারি হয়ে উঠে। অন্যান্য রোগীর স্বজনরা কান্না শুনে ছুটে আসেন। খবর পেয়ে হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া ছুটে আসেন। তিনি পুলিশের উপস্থিতিতে উত্তেজিত চিকিৎসকদেরকে শান্ত করে তরুণীদের মুক্ত করে দেন।

হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীর মেয়েরা দলবেঁধে বিশৃঙ্খলা চলাফেরা করে। তারা নানা অজুহাতে তাদের মায়ের ভুল চিকিৎসা হয়েছে বলে শুরু থেকেই অভিযোগ করে আসছিল। ডাক্তার ও নার্সদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে আসছিল। গতকালও একজন নার্সকে থাপ্পড় মারে।

বিকেলেও একজন নারী ডাক্তারের অহেতুক মোবাইল দিয়ে ভিডিও করছিল। এ দেখে ওই ডাক্তার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা উত্তেজিত হয়ে থাপ্পড় মারে। এ সময় তাদের আটক করা হলে তারা ভুল স্বীকার করলে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু তারা পরে বেশ কয়েকজন যুবক নিয়ে চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্টাফদের ওপর হামলা চালায়।

বহিরাগতরা একজন ডাক্তারকে মারতে মারতে বাইরে ফোয়ারার কাছে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে চিকিৎসকসহ অন্যান্য স্টাফরা ছুটে এসে তরুণীদের আটক করে। পরে তিনি খবর পেয়ে ছুটে এসে পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং তরুণীদের ছেড়ে দেন।

এ ঘটনায় চিকিৎসকরা নিরাপত্তা নিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। নিরাপত্তার দাবিতে তারা আজ ধর্মঘটেরও ঘোষণা দিতে পারেন বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় হাসপাতালের পক্ষ থেকে থানায় সাধারণ ডায়েরি বা মামলাও দায়ের হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।

শেরে বাংলা নগর থানার ডিউটি অফিসার এসআই সুমন জানিয়েছে, ৯৯৯ এ একজন ফোন করে জানায় হাসপাতালে ৬ জন নারীকে নির্যাতন করা হয়েছে। এই সংবাদ শুনে আমরা হাসপাতালে ফোর্স পাঠাই। তাদের সাথে কথা বলে কয়েকজন অভিযুক্ত এবং ভুক্তভোগীদের থানায় নিয়ে আসি। তবে তারা কোনো ধরনের লিখিত অভিযোগ না দিয়েই থানা থেকে চলে যায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here