রহমান মল্লিক :
রাহেলা বেগম । জীবন যুদ্ধে জয়ী একে সংগ্রামী নারী । নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জের বড় আমাদিয়া গ্রামের রাস্তার ধারে বসে নিপুন হাতে তৈরি করছেন বাঁশের তৈরি ঝাকা । নিত্যপন্য আনা নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হয় এই ঝাকা । হাতের কাজ তার নিখুঁত । কাজটি করছেন খুব স্বাচ্ছন্দে। আশে পাশের সবার সাথে কথা বলছেন, হাসি তামাশা করছেন অথচ বিরামহীন কাজ করে যাচ্ছেন। যেন কোন কষ্টই হচ্ছে না তার । পাশের একজন ব্যবসায়ী ওই কাজের জন্য মলি বাঁেশের চটা বানিয়ে দেন। আর তিনি ওই চটা দিয়ে নিপুণ শিল্পীর মতো বুনতে থাকেন এক একেকটি ঝাকার বুনন।
নাওয়া খাওয়ার সময় বাদে দিনের প্রতিটা সময় কাটে ঝাকা তৈরির কাজে। তার কাজটা যেমন পরিপাটি তার জীবনটাও তেমনি পরিপাটি। বছর চারেক আগে মারা গেছেন তার কৃষক স্বামী । কিন্তু তাতেও তিনি দমে যান নি । বাঁশের তৈরি জিনিস ও তৈজসপত্র বানিয়ে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। পঞ্চাশোর্ধ এই নারী এরই মধ্যে দুটো মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন । মেয়েরা আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন বলে জানান তিনি। একটা ঝাকা তৈরি করে কয় টাকা পান জিজ্ঞেস করতেই মৃদু হাসি দিয়ে বলেন, পাঁচ ট্যাকা। এত পোষায় আপনার ? কি করুম আর, এদিয়েই চলি। প্রতিদিন তিনি ২০/২৫ টি ঝাকা তৈরি করেন। থাকার মতো ছোট্ট একটি ঘর । সংসারে আর কেউ নেই । প্রতিবেশির সাথে যেন একই পরিবারের হয়েই বসবাস করেন। অল্প আয়েই ডাল ভাত খেয়ে বেশ দিন চলে যায়। তার অভাব নেই। চেহারায় দুঃচিন্তার ছাপ নেই । কথাবার্তায় তার জড়তা নেই, কোনো সঙ্কোচ নেই। আশে পাশের মানুষগুলোর সাথে তার সম্পর্ক হৃদ্যতার। সেই জসীম উদদীনের কবিতার মতোই “ থাকি সেথা সবে মিলে নাহি কেহ পর”।
কথা হলো রাহেলা বেগমের ভাতিজা সম্পর্কের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রিপন মিয়ার সাথে। তার পাশাপাশি বসে ঝাকা তৈরির চটা বানিয়ে চলছেন। তিনি ঝাকা তৈরির কাজটি করেন চাচি রাহেলা বেগমকে দিয়েই । পাশাপাশি বাড়ি । রিপন মিয়া ঢাকার পাইকারদের কাছে বিক্রি করে দেন তার তৈরি পন্য। এই কেনাবেচা হয় পাশের কালসি বাজারে। রিপন মিয়া এক সাথে কয়েকশ’ ঝাকা বিক্রি করেন পাইকারদের কাছে । ব্যবসা কেমন চলছে জানতে চাইলে রিপন মিয়া জানান, খারাপ না। সংসার ভালাভাবেই চইল্যা যায়।
রাহেলা বেগম সারাবছর ঝাকা তৈরির কাজটা করেন। তাকে বসে থাকতে হয় না। পাইকাদের অর্ডার অনুযায়ী মাঝে মাঝে কাজের চাপ বেড়ে যায়। তখন দিনরাত কাজ করেন। তার মতে কাজ জানলে মানুষের কোনো সমস্যা হয়না । নিয়মিত কাজ করেন বলে অল্প আয় সংসার চলে যায় । তা ছাড়া তার সংসারের ব্যয়ও কম। ঘরকন্যার কাজের পাশাপাশি তিনি কাজ শিখেছেন বলে জীবনের দুর্দিনে টিকে থাকতে পেরেছেন। তার এখন দুঃখ নেই, কষ্ট নেই, তিনি ভালো আছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here