সংবাদমাধ্যম জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। প্রতিদিন আমরা নানা সংবাদের জন্য মুখিয়ে থাকি। নতুন সংবাদ কিংবা আলোচিত সংবাদের ফলোআপ। প্রাত্যহিক জীবনের সঙ্গে দিন দিন অনিবার্য হয়ে উঠছে সংবাদ পরিবেশনা। এই সংবাদগুলোর নান্দনিক উপস্থাপনা ও স্টাইল আমাদের মুগ্ধ করে। আমরা কথা বলেছিলাম প্রতিশ্রুতিশীল পাঁচ নারী উপস্থাপকের সঙ্গে। আলোচনায় উঠে আসে পেশাগত নানা দিক।  গ্রন্থনা: আবদুর রহমান মল্লিক

উপস্থাপনায় অভিজ্ঞতা

বুদ্ধিমত্তা প্রয়োজন

সোনিয়া হক, ডিবিসি নিউজ

শুরুটা ২০০৫ সালে, আরটিভিতে অডিশনের মাধ্যমে, তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ বিভাগে তৃতীয় বর্ষে পড়ছি। সে সময় এনটিভি খুব জনপ্রিয় চ্যানেল ছিল, ব্যক্তিগত পছন্দের জায়গা থেকে অ্যাপস্নাই করেছিলাম, ডাক পড়ল আরটিভি থেকে, অডিশন দিলাম, টিকেও গেলাম। ব্যস সেই থেকে শুরু- চলছি এখনো। বলছিলেন সিনিয়র সাংবাদিক ডিবিসি নিউজের উপস্থাপক সোনিয়া হক। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যিনি ছিলেন পুরোদস্তুর সংগীতশিল্পী, রাজশাহী বেতারের তালিকাভুক্ত সংগীতশিল্পী।

সোনিয়া হক

সোনিয়া হক জানান, কাজ হিসেবে সংবাদ উপস্থাপনা খুবই চ্যালেঞ্জিং, একই সঙ্গে নান্দনিক, সেটা আরও বেশি মারাত্মক হয়ে ওঠে সংবাদভিত্তিক চ্যানেলগুলোতে, এখানে ভুলের কোনো সুযোগ নেই, কারও এক মুহূর্তের ভুল প্রতিষ্ঠানকে বিপদে ফেলে দিতে পারে, সেই দায়িত্ববোধটাকে মাথায় নিয়েই আপনাকে হটসিটে বসতে হবে। বাচ্চা অসুস্থ? বাবা মারা গেছেন দশদিনও হয়নি? পারিবারিক জীবনে ঝড় চলছে? সব ভুলে গিয়ে দর্শকদের হাসিমুখে স্বাগত জানাতে হবে, কারণ তখন একজন উপস্থাপক কোনো একজনের কন্যা-ভগিনী-মাতা নন, তখন তিনি পুরো দেশের সম্পদ, প্রতিষ্ঠানের আইডেন্টিটি, এই বোধটাই সত্যিকারের কাজের শক্তি। তিনি বলেন, পেশায় একটা চার্মিং তো আছেই। প্রতিদিনই যেহেতু একটা চ্যালেঞ্জ থাকে, বিখ্যাত কোনো মানুষের ইন্টারভিউ, দিনের কাজটা সেদিনের মতো পারফেক্টলি শেষ করা, পরের দিনের কাজে গতি দেয় বলতে পারেন। আর মজার কোনো ঘটনা যদি বলি নিউজ পড়তে পড়তে মশা-মাছি গিলে ফেলার ঘটনা তো অহরহই ঘটে। এটা একটা ভালো দিক যে মেয়েরা দিন দিন এ পেশায় এগিয়ে যাচ্ছে, তবে অনেক চ্যানেলেই দেখা যায় টিআরপির দোহাই দিয়ে মেয়েদের প্রাধান্য দিচ্ছে বেশি, এটা অনেকখানি নারীদের পণ্য হিসেবে ব্যবহার করারই শামিল। চ্যানেলগুলোর মনে রাখতে হবে ছেলে হোক বা মেয়ে, সবাইকে সুযোগ দিতে হবে যোগ্যতার ভিত্তিতে। সংবাদ উপস্থাপনা কোনো ছেলেখেলা নয়। অভিজ্ঞতা, নান্দনিকতা, দূরদর্শিতা, উপস্থিত বুদ্ধি এবং সর্বোপরি কাজের প্রতি সম্মান একজন সংবাদ উপস্থাপককে স্বীয় গুণে সমৃদ্ধ করে। সকালে ঘুম থেকে উঠে আর ঘুমাতে যাওয়ার আগে দিনে অন্তত দুবার ভাবী চাকরিটা এবার ছেড়ে দেবো, কিন্তু বিকাল গড়াতেই প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় কোন শাড়ি পরব, আজকের গুরুত্বপূর্ণ নিউজগুলো কী ছিল। আসলে ১৬ বছর তো কম সময় নয়, এটা এখন অভ্যেসে পরিণত হয়ে গেছে, তাই স্বাচ্ছন্দ্য তো দূরের কথা অনেক সময় ইচ্ছা, ভালোলাগা না লাগা অনেক কিছুকে জলাঞ্জলি দিয়ে কাজের টানে ছুটে যেতে হয়। তিনি দুঃখ করে বলেন, আমরা নারীর ক্ষমতায়ন, নারীশিক্ষা, নারীপ্রগতি, নারীশক্তি ইত্যাদি ইত্যাদি নিয়ে গালভরা বুলি কপচাই, কথায় কথায় জাতীয় সংসদের উদাহরণ টানি, কিন্তু যদি এসব থেকে একটু বাইরে বের হই, তাহলে দেখব আট-দশ ঘণ্টা যে নারীকর্মীটি তার সব শ্রম প্রতিষ্ঠানে ঢেলে দিয়ে গেল, কাজ শেষে সে ছয় নম্বর বাসটার জন্য অপেক্ষা করছে। কত কত প্রতিষ্ঠানে নারীরা এখনো যৌন হয়রানির স্বীকার হচ্ছে, কেউ চাকরি বাঁচানোর স্বার্থে মুখ বুজে সহ্য করছে তো কেউ সম্মান বাঁচানোর খাতিরে চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। নারী না ঘরে সুরক্ষিত হতে পেরেছে না বাইরে স্বাধীন।

শতভাগ সঠিক ছিলাম পেশা নির্বাচনে

জেবা রহমান, বাংলা ভিশন

নিউজ প্রেজেন্টার হিসেবে শুরুটা তার আয়োজন করেই। মায়ের খুব ইচ্ছা ছিল তাকে এই পেশায় দেখার। সঙ্গে তাকেও প্রবল আকর্ষণ করত সংবাদ পাঠ। অনার্সের শুরুতেই প্রেজেন্টেশন কোর্সে ভর্তি হয়ে যান। সেই সঙ্গে একটি প্রতিষ্ঠানে বাংলা ভাষার উপর লেখাপড়াও শুরু করেন। আর প্রথম বছরেই নিউজ প্রেজেন্টার হিসেবে নিয়োগ পান। মায়ের ইচ্ছা পূরণ আর নিজের পছন্দের পেশায় কাজ করতে পেরে উচ্ছ্বসিত বাংলা ভিশনের জেবা রহমান।

জেবা রহমান

তিনি জানান, পুরো দেশ তথা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, নিজের দেশের সব খবর তুলে ধরছি। অসাধারণ এক অনুভূতি! প্রচন্ড চ্যালেঞ্জিং, প্রতিদিনই একটা নতুন চ্যালেঞ্জ! টানা এত সময় লাইভে থাকা কিন্তু মুখের কথা নয়। পুরো নিউজ টিমের সারাদিনের কষ্টের ফলাফল একজন প্রেজেন্টারের পারফর্মেন্সের মধ্যদিয়ে আসে। তাই দায়িত্বের জায়গাটা অনেক বড়। আবেগাপস্নুত জেবা রহমান জানান, হাইস্কুলের শেষের দিকে প্রথম যার নিউজ পড়া দেখে আমার মধ্যে নিউজ পড়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়েছিল, তিনিই আমার আইডল ছিলেন। সেই প্রেজেন্টারের সঙ্গে একই টেবিলে বসে প্রথম যেদিন নিউজ পড়েছি, সেটি ছিল আমার পেশাগত জীবনের সবচেয়ে চমকপ্রদ ঘটনা। আর সেদিনই ভেবেছিলাম আমার চেষ্টা সার্থক হলো। তিনি বলেন, পেশা নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমি শতভাগ সঠিক ছিলাম। স্বভাবগত দিক থেকেও এ পেশাটি আমার সঙ্গে মানিয়ে যায়। পেশাকে রীতিমতো ভালোবাসি। কাজের সময় অন্য এক মানুষ আমি। স্টুডিওতে ঢুকলেই ভুলে যাই ব্যক্তিগত সবকিছু। নিউজ ছাড়া তখন মাথায় আর কিছুই থাকে না। নিজের শতভাগ দিয়ে আমি আমার কাজটাকে করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমি এক ভাগ্যবান নারী বিয়ের আগে এবং পরে, দুই পরিবারের কাছ থেকেই অনেক সাপোর্ট পেয়েছি….পেয়ে যাচ্ছি। নিবেদিত প্রাণ এই সংবাদ পাঠিকা জানান, অনেক সময় লেটনাইট নিউজ থাকে, মাঝেমধ্যে অনেক ভোরেও যেতে হয়। কাজের ক্ষেত্রে সময়ের কোনো বিধিনিষেধ আমার কাছে নেই। এই পেশা আমি স্বেচ্ছায় বেছে নিয়েছি, আর সবকিছুর জন্য আন্তরিকভাবে প্রস্তুত থাকি। নারীর কাজের পরিবেশ সম্পর্কে তিনি বলেন, এখনো কর্মপরিবেশ পুরোপুরি তৈরি হয়নি। একা নারী যতই চেষ্টা করুক, সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া সঠিক পরিবেশ কখনোই তৈরি হবে না। অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, যেখানে নারীকর্মীদের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পদোন্নতি হচ্ছে না। এখন সময় এসেছে দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর। প্রতিটা ঘর হোক শুদ্ধ শিক্ষালয়। আর আমরা নারীরাই পারি সমাজের এই বৈষম্যের দেয়াল ভেঙে সন্তানকে সুশিক্ষা দিতে। যেন এই সন্তানরাই একদিন নারীদের সঠিক সম্মান করতে শেখে। সমাজ থেকে দূর করে দিতে পারে নারী-পুরুষের ভেদাভেদ।

মাথা ঠান্ডা রেখে অনেক

বিপদ উতরে যেতে হয়

মৌসুমী আহমেদ লোপা, যমুনা টিভি

একটি সাংস্কৃতিক পারিবারিক পরিমন্ডলে বেড়ে উঠেছেন মৌসুমী আহমেদ লোপা। ক্লাস টু থেকে নাচের স্কুলে ভর্তি হন তিনি। নিজেকে বিকশিত করার পালা শুরু হয় সেখান থেকেই। স্কুলজীবন থেকেই বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করে সবার দৃষ্টি কাড়েন। শিক্ষাজীবনেই কাজ করেন বাংলাদেশ বেতার রংপুর এবং রাজশাহী কেন্দ্রে প্রায় এগারো বছর। মায়ের প্রেরণা, বাবা ও ভাইয়ের সহযোগিতা আর নিজের ঐকান্তিক চেষ্টায় মৌসুমী পেশাগত দক্ষতা অর্জন করতে সক্ষম হন। বিয়ে করেন লেখাপড়া শেষ হওয়ার আগেই। হাজবেন্ড মারুফ আহমেদের আন্তরিকতায় তার চলার পথ হয়ে ওঠে মসৃণ। টেস্টে উত্তীর্ণ হওয়ার পর যোগদান করেন সময় টিভিতে নিউজ প্রেজেন্টার হিসেবে। ২০১৪ থেকে কাজ করছেন যমুনা টিভিতে। তিনি এখন সংবাদ পাঠিকা শুধু নন বার্তাকক্ষ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করছেন।

মৌসুমী আহমেদ লোপা

মৌসুমী বলেন, তাৎক্ষণিক সংবাদ পড়ার মজাটাই আলাদা। এখানে বেশ চ্যালেঞ্জ থাকে। রিপোর্টারের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে তখন ফুটেজ দেখে পরিস্থিতি বর্ণনা করতে হয়। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে কাজ করে যাচ্ছি দর্শক বিবেচনা করবেন কতটা সফল হচ্ছি। তিনি বলেন, প্রথমত ভেবেছিলাম অন্য কোনো কাজের পাশাপাশি এ কাজটা করব। কিন্তু নেশাটাই এখন পেশা হয়ে গেছে। কাজটাকে ভালোবেসেই করছি সেটাই বড় কথা। তবে পরিবারের সাপোর্ট না থাকলে এ পেশায় ভালো করা কঠিন। অনেক নারী আছেন সন্তান কার কাছে রেখে যাবেন শুধু সে কারণে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন। একদিন অফিসের প্রিন্টারে ঝামেলা হচ্ছিল, নিউজের স্ক্রিপ্ট ছাড়াই পড়তে বসে পড়ি। অটো কিউ সেটাও চলে যায়, হার্ড কপিটিও নেই, অবস্থা ছিল পুরোটাই বেগতিক। প্রডিউসার বুঝে যান। তিনি টক ব্যাকে মুখে মুখে বলছেন আর আমি শুনে শুনে কিছুটা শর্ট করে তাৎক্ষণিক এডিট করে পড়েছি। খুব ভড়কে গিয়েছিলাম কিনা কি হয়ে গেল। অন্যদের কাছে ফিডব্যাক নিয়ে জানলাম তেমন কোনো সমস্যাই হয়নি। মাথা ঠান্ডা রেখে ঠিকই বিপদ উতরে যেতে পেরেছিলাম। সে মুহূর্তের কথা মনে হলে আজও রোমাঞ্চিত হই। মৌসুমী বলেন, নারীকে অধিকার সচেতন হতে হবে। কেউ তার অধিকার আদায় করে দেবে না। নারীকে সর্বপ্রথম নিজেকে যোগ্য করে তুলতে হবে। তবেই সব ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ আরও বাড়বে।

মনোজাগতিক উন্নয়ন ঘটাতে

পারে ইলেকট্রনিক মিডিয়া

সাবরিনা হাসনাত, মাছরাঙা টিভি

নিউজ প্রেজেন্টার হিসেবে মাছরাঙা টিভিতে কাজ করছেন সাবরিনা হাসনাত। বাবার সরকারি চাকরির সুবাদে তাকে থাকতে হয়েছে বিভিন্ন জেলায়। তাই নাগরিক জীবন তাকে খুব টানত। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স মাস্টার্স শেষ করে তাই বেছে নিয়েছিলেন তার পছন্দের পেশা। কারণ সংসার সামলে ন’টা পাঁচটা অফিস করা বেশ কষ্টকর। অসম্ভব ভালোবেসে, দায়িত্ব নিয়ে তিনি কাজ করছেন বলে জানান।

সাবরিনা হাসনাত

তিনি বলেন, একজন সংবাদ পাঠিকা তার কাজটা বুঝলে এমনিতেই দায়িত্বটা বেড়ে যায়। কারণ সংবাদ পাঠিকা যদি সঠিক পারফর্ম করতে না পারেন তবে সংবাদ পরিবেশনার ক্ষেত্রে সহকর্মীদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। সেই বিবেচনায় এটি একটি চ্যালেঞ্জিং পেশাও বটে। সাবরিনা জানান, একটি শিশুসন্তান থাকায় শুরু থেকে খন্ডকালিন চাকরি খুঁজছিলাম। প্রথম পছন্দের ছিল সংবাদ উপস্থাপনা। তবে প্রচন্ড প্রতিযোগিতার মধ্যদিয়েই উপস্থাপনার কাজে নিজেকে যোগ্য করে তুলতে হয়েছে। পুরোপুরি স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করছি আমি। ভালো পরিবেশ যে কোনো কাজকে সহজ করে দেয়। নারী-পুরুষ বলতে কথা নেই যোগ্যতাই যে কোনো পেশার ভিত্তি হওয়া উচিত। তিনি জানান, গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন যখন চলছিল তখন আমাদের প্রচুর লাইভ করতে হয়েছিল, সে সময় একদিন বেলা ১২টায় লাইভ শুরু করি। সেটা সন্ধ্যা ৭টার নিউজের আগ পর্যন্ত চালিয়ে নিতে হয়েছিল আমাকে। এটা আমার জন্য খুবই তৃপ্তির একটি ঘটনা। কারণ লাইভ করা খুবই চ্যালেঞ্জিং আর এটা দীর্ঘ সময় ধরে চালিয়ে যাওয়া সহজসাধ্য ব্যাপার নয়। সেদিনের ঘটনা আত্মবিশ্বাসটাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। সাবরিনার মতে, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া খুবই শক্তিশালী মাধ্যম। সমাজ পরিবর্তনে দ্রম্নততার সঙ্গে কাজ করতে পারে এই মাধ্যম। তবে আমরা যেন আমাদের মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি থেকে খানিকটা সরে যাচ্ছি, সেই জায়গাটি নিয়েও কাজ করার আছে। বয়সভিত্তিক এবং বিনোদিত করে এমন অনুষ্ঠান প্রচার করলে শিশুরা হয়তো অন্যান্য ডিভাইসএর প্রতি আসক্ত কম হতো। শিশু-কিশোরদের মনোজাগতিক উন্নয়নে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া বড় ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি বলেন, নারীর শারীরিক নিরাপত্তা আরও বেশি নিশ্চিত করা জরুরি। যে দেশের মোট জনগোষ্ঠীর অর্ধেকই নারী সে দেশের উন্নয়নে নারীকে কাজে লাগাতেই হবে এবং তার কাজকে যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। আর নারীর কাজ নারী থেকে যাওয়া নয়, মানুষ হওয়া।

 

কাজের সঙ্গে বেড়েছে

সামাজিক দায়বদ্ধতা

মাহমুদা মনি, সময় টিভি

সত্যি বলতে ছোটবেলা থেকেই সংবাদ পাঠকদের প্রতি এক ধরনের ফ্যান্টাসি কাজ করতো। তাদের সুন্দর করে কথা বলা, টিপটপ উপস্থাপন খুবই আকর্ষন করতো। ভাবতাম তারা বুঝি সংবাদ মুখস্ত করে বলছেন । সময়ের সাথে ধীরে ধীরে বুঝতে লাগলাম ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে সংবাদ পরিবেশনার গুরুত্ব । সেই ভালোলাগা থেকেই আস্তে আস্তে এই পথে হাঁটা, এরই প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে নিউজ প্রেজেন্টেশনের উপর একটা কোর্স করি। কাজের শুরুটা ছিলো ২০১৯ সালে একটা অনলাইন চ্যানেল এ খন্ডকালীন সংবাদ পাঠিকা হিসেবে, পরবর্তীতে একটা স্যাটেলাইট চ্যানেল এ যোগ দেই এবং তারই ধারাবাহিকতায় আজ সময় টিভির মত জনপ্রিয় স্যাটেলাইট চ্যানেল এ সংবাদ উপস্থাপিকা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি। কথাগুলো বলছিলেন সময় টিভির মাহমুদা মনি।

মাহমুদা মনি জানান, কিছু অনূভুতি থাকে যেগুলো ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। আমি যখন একটা গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ পরিবেশন করি, তখন আমার ভিতরে একটা বিষয় কাজ করে, আমি অন্তত একটা জায়গায় বসে সারাদেশের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছি, বস্তুনিষ্ঠ ও সত্য সংবাদ মানুষ আমার মাধ্যমে জানতে পারছে। মুহূর্তের মধ্যে লক্ষ-কোটি মানুষের কাছে পৌঁছানোর কাজটা যেমন আমাকে আত্মতৃপ্তি দেয় ঠিক তেমনি সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে কাজটা করছি এটা ভেবে প্রচন্ড আনন্দ বোধ করি।

তিনি জানান, এখন প্রতিযোগিতার যুগ এবং নারীরা কিন্তু যোগ্যতা বলেই  এই সেক্টরে তাদের পদচারনা বাড়িয়েছে । আমি তো মনে করি Women empowerment এর জায়গাটাতে মিডিয়া সব চেয়ে অগ্রনী ভূমিকা পালন করছে। এখন নারীদের এগিয়ে চলাটা সময়ের দাবি আর একটা পুরুষ যতটা কর্মদক্ষ নারীরাও ঠিক ততটা বা কোনো ক্ষেত্রে তার থেকেও বেশি কর্মদক্ষ এটা কিন্তু আমাদের ভালো ভালো কাজের মধ্য দিয়ে প্রতিনিয়ত প্রমান হচ্ছে।

কাজের ক্ষেত্রে কতটা স্বচ্ছন্দ বোধ করছেন জানতে চাইলে জানান, আমার ক্ষেত্রে স্বাচ্ছন্দবোধের ব্যাপারটা আপেক্ষিক। আমি প্রতিটা নিউজে নিজেকে সর্বোচ্চ মেলে ধরবার চেষ্টা করি, তবে নিউজের পর আর কোথায় কোথায় উন্নতি করতে হবে হবে সেটা নিয়ে ভাবি এবং কাজ করি। আমি মনে করি সংবাদ উপস্থাপনা একটা শিল্প আর শিল্পে প্রতিনিয়ত শিখতে হয়, সেই দিক থেকে চিন্তা করলে স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গাটা এখনো শতভাগ না। তবে আমি আমার কাজটি প্রচন্ড উপভোগ করি।

মাহমুদা মনি একজন ফুড টেকনোলজিস্ট। ফুড রিলেটেড কিছু কাজের সঙ্গে তিনি জড়িত। জবের পাশাপাশি একটি অলাভনজক সংগঠনে  জড়িত,  যারা সাধারণ মানুষদের মাঝে নিরাপদ খাদ্য নিয়ে সচেতনতা তৈরির কাজ করছে।

মাহমুদা মনি উল্লেখ করেন, একজন নারী হয়ে জন্ম নিয়ে আমি এজন্য গর্ববোধ করি। আমার মতে নারীর প্রতি সহিংসতা কমাতে পারে কেবল মাত্র পুরুষদের ইতিবাচক মনোভাব, এর মানে আমি এটা বলছি না যে সকল পুরুষদের মনোভাব খারাপ। সত্য বলতে যারা সহিংসতা ঘটায় তারা কিন্তু সংখ্যায় খুবই সামান্য, এই গুটিকয়েক মানুষকে প্রতিহত করার জন্য সকল নারী ও পুরুষকে সম্মিলিত ভাবে কাজ করতে হবে।

 

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here