নিউজ বাংলা ডেস্ক:

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার সরিষাবাড়ি উচ্চবিদ্যালয়ে অর্ধশতাধিক ছাত্রের মাথায় কাঁচি চালিয়ে বিপাকে পড়েছেন ওই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি এবাদুল হক। গতকাল সোমবার এ নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে এবাদুল হক ক্ষমা চান। তিনি নাপিতের কাছ থেকে সুন্দর করে ছাত্রদের চুল কেটে নেওয়ার খরচও বহন করার ঘোষণা দেন।

গত রোববার দুপুরে এবাদুল হক ওই স্কুলের শিক্ষার্থীদের চুল কাঁচি দিয়ে ইচ্ছেমতো কেটে দেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ওলিউজ্জামান এবং মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুল হক বলেছেন, তাঁরা ঘটনাটি শুনেছেন। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন।

স্কুলের শিক্ষার্থীরা জানায়, তাদের দু–একজনের মাথার চুল বড় ছিল। কিন্তু রোববার স্কুল পরিদর্শনে এসে এবাদুল হক বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষে গিয়ে নিজে ছাত্রদের মাথার চুল কেটে দেন। শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, এবাদুল হক পাশের একটি সেলুন থেকে কাঁচি আনান। এরপর নিজেই শ্রেণিকক্ষে ঢুকে এবড়োথেবড়োভাবে শিক্ষার্থীদের চুল কেটে দেন। এ ঘটনায় অনেক ছাত্র লজ্জায় গতকাল স্কুলে আসেনি। শিক্ষার্থীরা সভাপতির বিচার না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসে না ফেরার ঘোষণা দিয়েছে।

গতকাল স্কুলে এসে অনেক অভিভাবক প্রধান শিক্ষকের কাছে সভাপতির এমন কাণ্ডের প্রতিবাদ জানান। তাঁদের মধ্যে অভিভাবক সালাম হোসেন ও তাহের আলী বলেন, গত সপ্তাহেই তাঁরা তাঁদের ছেলেদের চুল কাটিয়েছেন। এরপরও এবাদুল হক তাদের চুল কেটে দিয়েছেন। এখন ছেলেরা লজ্জায় স্কুলে আসছে না। তাঁরা আরও বলেন, ছেলেমেয়েরা কোনো অপরাধ করলে তাঁরা অভিভাবকদের জানাতে পারতেন। কিন্তু সভাপতি নিজেই চুল কাটতে পারেন না। তাঁরা সভাপতির বিচার চান।

জানতে চাইলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আফসার আলী সরদার বলেন, গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় এ ঘটনায় স্কুলে জিওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য, স্কুলের শিক্ষক ও অভিভাবকদের নিয়ে একটা বৈঠক করা হয়। বৈঠকে সভাপতি ঘটনার জন্য ভুল স্বীকার করে সবার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।

ইউপি চেয়ারম্যান হোসনে আরা বেগম বলেন, অভিযোগ পেয়ে তিনি স্কুলে যান। সেখানে সভাপতিও উপস্থিত ছিলেন। সভাপতি সবার সামনে ঘটনার জন্য জন্য ক্ষমা চান। তিনি বাচ্চাদের নতুন করে চুল কেটে নেওয়ার খরচ বহন করতে চান।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুল হক বলেন, ‘ছাত্রদের মাথার চুল কাটার ঘটনাটি শুনেছি। কিন্তু ক্লাস বর্জন বা অভিভাবকেরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন, এ বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে সভাপতি বা শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদের মাথার চুল কাটার অধিকার নেই। আমি বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

পুঠিয়া ইউএনও বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের চুল কাটার কোনো নির্দেশনা দিইনি। এটি করার অধিকারও কারও নেই। তারপরও কেন করা হয়েছে, স্কুলের সভাপতির কাছে তার ব্যাখা চাওয়া হবে। এরপর বিষয়টি তদন্ত করে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’

অভিযুক্ত এবাদুল হক উপজেলা বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের সাধারণ সম্পাদক। ছাত্রদের চুল কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল সকালে তিনি বলেছিলেন, তিনি দুই মাস আগে সভাপতির দায়িত্বে এসেছেন। তিনি চান স্কুলের একটা নিয়ম থাকুক। তিনি সব সময় ছাত্রছাত্রীদের নিজের সন্তানের মতো দেখেন। তাই চুল ছোট করে দেওয়া হয়েছে। তবে গতকাল বৈঠকের পরে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here