নিউজ বাংলা ডেস্ক:

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মানবতাবোধের চেতনায় উজ্জ্বীবিত হয়ে  মৃত্যুবার্ষিকীতে মঙ্গলবার ভোরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জাতীয় কবির সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে তার ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকীর কর্মসূচির সূচনা হয়।

বাংলা ভাষার কবিতাপ্রেমিদের কাছে নজরুল প্রেমের কবি, চির যৌবনের দূত; সেইসঙ্গে তিনি বিদ্রোহী, গৃহত্যাগী বাউণ্ডুলে। ১৯৭৬ সালের ২৯ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (তৎকালীন পিজি হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে সমাহিত করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে। মঙ্গলবার সকালে সেখানেই ফুল দিয়ে কবিকে স্মরণ করে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, “জাতীয় কবি নজরুল অসাম্প্রদায়িকতা, সাম্য, ভালোবাসা ও সম্প্রীতির প্রতীক। তার এই মূল্যবোধগুলোর বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল কবির সাহিত্যকর্মের মধ্যে, যা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় অসাধারণ অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছিল।” এ বিষয়টি অনুধাবন করেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কবি নজরুলকে কলকাতা থেকে ঢাকায় ফিরিয়ে এনেছিলেন বলে মন্তব্য করেন উপাচার্য।

জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে নজরুলকে নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। এখন তার সাহিত্যকর্ম বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত করে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে হবে। তাতে সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা ও হানাহানি থেকে বিশ্ব মুক্তি পাবে।” বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মাদ সামাদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামালও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবদুস সবুর, উপ দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন অসম্প্রদায়িক চেতনার মানবতাবাদী, তার প্রতিটি লেখায় প্রতিবাদী কণ্ঠ, তার প্রতিটি লেখা অসম্প্রদায়িক চেতনার।

“আমরা আজ শপথ করব, আমরা সাম্প্রদায়িক শক্তিকে পরাজিত করে কবির স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ব।” সরকার কবির পরিবারের সদস্যদের খোঁজ রাখছে না- এমন অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সেতুমন্ত্রী কাদের বলেন, “জাতীয় কবি হিসেবে সবার কাছে তিনি সমাদৃত, এটা মুখের কথা নয়, এটা আমাদের বিশ্বাসে, প্রতিটি কর্মে প্রমাণ করেছি। আমরা বাস্তবে তার চেতনাকে ধারণ করছি। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা, আমরা তাকে স্মরণ করছি, শ্রদ্ধা করছি।”

আওয়ামী লীগের পর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগসহ দলের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও জাতীয় কবির সমাধিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান।  বিএনপির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দলের যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন বলেন, ‘‘জাতীয় কবির মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদেরকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের শপথ নিতে হবে। জাতীয় কবি আমাদের যে বিদ্রোহ শিখিয়েছেন, সেই বিদ্রোহে অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা আমাদের নেত্রীকে মুক্ত করব।”

অন্যদের মধ্যে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, নজরুল সংগীত শিল্পী পরিষদ, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গবন্ধু লেখক পরিষদ, নজরুল চর্চা কেন্দ্র বাঁশরী, বাসদসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা সকালে কবির সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

১৮৯৯ সালের ২৪ মে (১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কাজী নজরুল ইসলাম। শৈশবেই স্বজন হারানো ‘দুখু মিয়া’ দারিদ্র্য আর সব বাধা ঠেলে একসময় বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা হয়ে ওঠেন।

১৯৪২ সালে দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে ক্রমশ বাকশক্তি হারান নজরুল। স্বাধীনতার পরপরই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসুস্থ কবিকে ভারত থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। নজরুল হন বাংলাদেশের জাতীয় কবি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here