নিউজ বাংলা ডেস্ক :

আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির খুনীদের বাঁচাতে নানাভাবে তৎপরতা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। শনিবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। বলেন, নুসরাতের খুনীরা সবাই ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী। বিভিন্ন দিক থেকে হত্যা মামলার আসামি ও তাদের দোসরদের পক্ষে একটি গ্রুপ মাঠে নেমেছে।

রিজভী বলেন, সোনাগাজীর মাদ্রাসা শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন শামীম, যুবলীগ নেতা নুর উদ্দিন, জাবেদ হোসেন, জোবায়ের আহমেদ, আবদুুল কাদের, ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলা, সোনাগাজী পৌর কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মকসুদুল হক এবং প্রভাষক আবছার উদ্দিনের পক্ষে সাফাই গাইতে শুরু করেছে ওই গ্রুপটি। তারা রাজনৈতিক নেতাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধর্নাও দিচ্ছে বলে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। ঘটনায় জড়িত সবাই ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ফেনী হলো ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীদের নিরাপদ জনপদ।

সেখানে আওয়ামী লীগের গডফাদারদের ছত্রছায়ায় বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। তারা তাদের নিজেদের দলের নেতাকেই আগুনে পুড়িয়ে ঝলসিয়ে দিয়েছে। সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য হিসেবে একসময় সারাদেশে আলোচিত হওয়া ফেনীতে রাজনৈতিক হত্যা, গুম, অপহরণ, দিনে-দুপুরে অস্ত্র উঁচিয়ে ছিনতাই, টেন্ডারবাজি, বালুমহাল লুট, বাসস্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তারে অস্ত্রের প্রকাশ্য মহড়া, সোনার দোকানে ডাকাতি, ব্যাংকের টাকা ছিনতাই ছিল এখানকার নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দোর্দন্ড প্রতাপশালী ও সন্ত্রাসের গডফাদারদের সন্ত্রাসযজ্ঞের বিরোধিতা করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত প্রশাসনের কর্মকর্তাদেরই প্রাণভয়ে রাতের আঁধারে পালিয়ে যেতে হয়েছে। গত দুই দশকের খতিয়ান দেখলে এমন ঘটনাও পাওয়া যাবে ভুরি ভুরি। প্রকাশ্যে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর নৃশংসভাবে হত্যার জন্য এখানে একসময় নির্ধারিত ছিল ‘মৃত্যুকূপ’। ড্রিল মেশিন দিয়ে মানুষকে ছিদ্র করে মেরে ফেলার রেকর্ডও রয়েছে ফেনীতে। খুন, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, ২, ৩, কিংবা ৪ সন্তানের জননীরাও রেহাই পাচ্ছেন না গণধর্ষণ থেকে। আওয়ামী লীগের গডফাদারদের ছত্রছায়ায়ই চলছে এসব অপকর্ম। তাই নুসরাত হত্যায় কতিপয় খুনীদের ধরা হলেও আসল খুনীদের ধরা হবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ জনমনে। তাই নুসরাত হত্যা মামলার তদন্ত তনু ও সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনীর হত্যার মতোই হয় কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। শুধু আমরা নই, এই আশঙ্কা করেছেন স্বয়ং মহামান্য হাইকোর্টও।

রিজভী বলেন, আপনারা গণমাধ্যমের মাধ্যমে নিশ্চয়ই জেনেছেন, মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ করতে গিয়ে ফেনীর সোনাগাজী থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের হয়রানির শিকার হয়েছিলেন নুসরাত জাহান রাফি। ওসি তার নিজের কক্ষে ঘটনা জানার নাম করে আরেক দফা হয়রানি করেছিলেন মেয়েটিকে। এ সময় অঝোরে কাঁদতে থাকা মেয়েটির ভিডিওচিত্র ধারণ করা হচ্ছিল। তখন ওসির কক্ষে কোনো নারী, আইনজীবী বা নারী পুলিশ সদস্যও ছিলেন না। এই ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে গেছে। কর্তব্য পালনে অবহেলার অভিযোগে ৯ই এপ্রিল মোয়াজ্জেম হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়। যৌন হয়রানির অভিযোগ করার সময় ওসির ভিডিও ধারণ করার ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তারপর সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়াও আইনসিদ্ধ নয়। সরকার ওসিকে প্রত্যাহার করেই দায় সেরেছে। এখনও তার বিরুদ্ধে আইনগত বা ফৌজধারী আইনে কোন ব্যবস্থা নেয়নি সরকার।

তিনি বলেন, মেয়েটি থানায় অভিযোগ দেয়ার পর যদি পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নিতো তাহলে তাকে পুড়িয়ে মারতে পারত না। আমি নুসরাত জাহান রাফীর হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউ (পিজি)-তে ভর্তি করলেও সরকার নিয়ন্ত্রিত ওই হাসাপাতালে তার প্রয়োজন মতো চিকিৎসা হচ্ছে না এমন অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, তার প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে না। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নেই, অষ্টিয়-আর্থারাইটিস এর ব্যথা এখন প্রচন্ড আকার ধারণ করেছে। বিএসএমএমইউ-তে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য কোন আধুনিক যন্ত্রপাতিও নেই। আমরা শুরু থেকেই বিএনপি চেয়ারপারসনকে তার পছন্দ অনুযায়ী বিশেষায়িত হাতপাতালে চিকিৎসার দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু সরকার তা আমলে নেয়নি, বরং বেগম জিয়াকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে মিথ্যাচার করছেন, যা পীড়াদায়ক। দেশনেত্রীর শারীরিক অবস্থা গুরুতর হওয়া সত্বেও চিকিৎসা নিয়ে দেশবাসীর কাছে সঠিক তথ্য তুলে ধরা হয়নি। অথচ সরকারের মন্ত্রী ও নেতারা বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে প্রতিনিয়ত বিভ্রান্তিকর কথাবার্তা বলছেন। দেশনেত্রীর প্রতি এহেন আচরণ সরকারের প্রতিহিংসামূলক মনোবৃত্তিরই পরিচায়ক। রাতের ভোটের প্রধানমন্ত্রী তার কোন প্রতিদ্বন্দ্বী রাখতে চান না। আর এজন্য দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্তি দিতে ও সুচিকিৎসায় বাধা দিচ্ছে সরকার। মূল কারণ একটাই বিএনপি চেয়ারপার্সনকে কৌশলে দুনিয়া থেকে সরিয়ে আবারও পুরোপুরি বাকশালের নামে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। আমি আবারও সরকারের উদ্দেশ্যে বলতে চাই,  দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নি:শর্ত মুক্তি দিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সহ দপ্তর সম্পাদক মো. মনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here