নিউজ বাংলা ডেস্কঃ অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন। সারি সারি সুন্দরী, পশুর, কেওড়া, গেওয়া এবং গোলপাতা গাছ। দৃষ্টি যতদূর যায় যেন কোনো শিল্পী সবুজ অরণ্য তৈরি করে রেখেছেন।
ঢাকা থেকে যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সুন্দরবন যেতে চাইলে সরাসরি বাসে খুলনা যেতে হবে। এছাড়া ট্রেন ও প্লেনেও খুলনা যাওয়া যায়। ঢাকার কমলাপুর থেকে খুলনার ট্রেনে উঠে খুলনা শহরে যেতে পারবেন। প্লেনে যেতে হলে যশোর নামতে হবে। যশোর থেকে বাস অথবা গাড়ী ভাড়া করে খুলনা যাওয়া যায়। খুলনা শহরে অনেক আবাসিক হোটেল রয়েছে। সেখানে রাতে অবস্থান করে পরের দিন সকালে সুন্দরবন যেতে হবে। এজন্য আপনাকে প্রথম যেতে হবে মংলা। খুলনা থেকে প্রাইভেট গাড়ি অথবা বাসে মংলা যাওয়া যায়। দূরত্ব ৫০ কিলোমিটার। মংলা ঘাট থেকে ট্রলার কিংবা লঞ্চে যেতে হবে সুন্দরবন। মংলা ঘাট থেকে সুন্দরবনের করমজল যেতে সময় লাগে দুই ঘন্টা। সকালে খুলনা থেকে মংলা হয়ে সুন্দরবন ঘুরে সন্ধ্যার মধ্যে আবার খুলনা ফিরে আসা যায়। এছাড়া খুলনা স্টিমার ঘাট থেকে সকালে সরাসরি সুন্দরবন লঞ্চ ছেড়ে যায়। এগুলো বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির। তাদের কাছ থেকে আগে টিকিট কেটে রাখতে হবে।
ভ্রমণকালে যা সঙ্গে রাখতে হবে
ভ্রমণকালে সুপেয় পানীয় জলের ব্যবস্থা রাখা জরুরি। এছাড়া প্রাথমিক চিকিৎসার বাক্স ও অভিজ্ঞ টুর অপারেটর। বন কর্মকর্তার অনুমতি প্রাপ্তির পর ভ্রমণকালে সুদক্ষ ও সশস্ত্র বন প্রহরী। এছাড়া প্রয়োজনীয় ব্যবহারের কাপড়। এক জোড়া কেডস, শীতকালে গেলে শীতবস্ত্র, একটি করে কম্বল, রেডিও, ক্যামেরা। নাগরিক জীবনের শত ব্যস্ততায় আপনি যখন ক্লান্ত। তখনই ঘুরে দেখে আসতে পারেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি সুন্দরবন।
সুন্দরবনে কী কী দেখবেন
পশুর নদী থেকেই মূলত শুরু হবে সুন্দরবন যাত্রা, নৌকায় ওঠার পরপরই চোখের সামনে ফুটে উঠবে সুন্দরবনের গাছের সারি। তরতর করে নৌকা এগোবে পশ্চিম দিকে, নৌকার ছাদে বসার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে। সেখান থেকেই খুব ভালোমতো নদীতে খেয়াল রাখলে দেখা যাবে, কিছু ডলফিন একটু পর পর ভেসে উঠছে আবার ডুব দিচ্ছে। এগুলোকে বলা হয় বটলনোজ ডলফিন বা ইরাবতী ডলফিন। নৌকা ৪০ মিনিট চলার পর সোজা এসে থামবে করমজলের ঘাটে। করমজলে যাওয়ার সময় জোয়ার-ভাটার বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে। ভাটার সময় করমজলে গেলে তাড়াতাড়ি যাওয়া যাবে।
করমজল মূলত হরিণ ও কুমির প্রজনন কেন্দ্র। করমজলে নেমেই বনে ঢোকার টিকিট কাটতে হবে, জনপ্রতি ২৩ টাকা করে টিকিট কেটে বনে পা ফেললেই গা ছমছম করে উঠবে শিহরণে। নিমেষেই চোখ চলে যাবে গাছের আড়ালে, গোলপাতার ফাঁকে, হেতাল বনের ঝোপে। কিছু একটা নড়তে দেখলেই মনে হবে, এই বুঝি বিরাট গর্জন করে ছুটে আসছে বনের রাজা, বেঙ্গল টাইগার। করমজলে ঢুকতেই চোখে পড়বে সুন্দরবনের বিশাল একটা থ্রিডি ম্যাপ। এখানে খুব সহজেই নিজেদের অবস্থান দেখা যাবে। এরপর সোজা হয়ে দাঁড়ালেই দুটো রাস্তা আসবে সামনে-একটা এঁকেবেঁকে বাঁ দিকে হারিয়ে গেছে, আরেকটা ডানে হাত বাড়িয়ে ডাকছে। ডানের রাস্তা ধরে কিছুদূর গেলেই একটা বিশাল খাঁচা দেখা যাবে, এখানে হরিণের বসবাস। মূলত এটা হরিণ প্রজনন কেন্দ্র, ছোট, বড়, মাঝারি-সব আকৃতির হরিণ ছুটে আসবে আপনাদের দেখে। মানুষে তাদের কোনো ভয় নেই, ঘাস আর কচি পাতা ছিঁড়ে দিলে খুব আয়েশ করে হাত থেকে নিয়ে খেতে শুরু করবে। এরপর রয়েছে কুমিরের আস্তানা। এখানে এক মাস বয়সী কুমির থেকে শুরু করে এক বছর বয়সী কুমির রয়েছে। দেখলে অবাক হয়ে যেতে হবে যে এই বিশালদেহী কুমিরের সাইজ একসময় থাকে টিকটিকির মতো!
কুমির দেখা শেষ করে ঢুকতে হবে বাঁ পাশের ট্রেইলে। একে বলা হয় ‘মাংকি ট্রেইল’। সুন্দরবনের মাঝখান দিয়ে বানানো কাঠের এক রাস্তা ধরে কিছুদূর হাঁটলেই চোখে পড়বে ৩০ থেকে ৪০টি বানরের এক বিশাল দল। বছরের যেকোনো সময়ে গেলেই এদের একই জায়গায় পাওয়া যাবে। এই দলে বাচ্চা থেকে শুরু করে বিশালদেহী সব বয়সের বানর রয়েছে। মানুষ দেখলেই কোথায় ভয় পেয়ে চলে যাবে তা না, বুক চিতিয়ে সামনে এসে দাঁড়াবে। তাদের মধ্যে বয়সে বড় নেতাটি, বন বিভাগ তার নাম দিয়েছে ‘ভোলা’-এবার সে পথ আগলে দাঁড়িয়েছে, কোনোভাবেই যেতে দেবে না। আশপাশের সব বানর একসঙ্গে চেঁচামেচি করছে, সে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি! এই সময় যদি কেউ ভয় পেয়ে দৌড় দেয়, তাহলেই শেষ। বানরের দল খামচে একাকার করে দেবে! হাতে কোমল পানীয়র একটা আধখাওয়া বোতল থাকলে সেদিকেই থাকবে নেতার নজর। কালবিলম্ব না করে বোতল বাড়িয়ে দিলেই সে খপ করে ধরে ফেলবে, এরপর চোখের নিমেষে ঢকঢক করে পুরো বোতল সাবাড় করে দেবে! তাজ্জব হয়ে দেখবেন, এবার সে পথ ছেড়ে দিয়েছে। ভাবখানা এমন যে তোমাদের এই বনে ট্যাক্স দেওয়া হয়ে গেছে, এবার তোমরা ঘুরে আসতে পারো। গোটা তিরিশেক বানরের মাঝখান দিয়ে আর কোনো ঝামেলা ছাড়াই বাকি রাস্তা পার হয়ে যাওয়া যাবে।
আকর্ষণীয় ট্যুর স্পট:
সুন্দরবনের পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের টাইগার পয়েন্ট খ্যাত কটকা ও কচিখালী অভয়ারণ্য কেন্দ্র, মংলা বন্দরের অদূরে কর্মজল বন্যপ্রাণী ও কুমির প্রজনন কেন্দ্র, হারবাড়িয়া ইকোট্যরিজম কেন্দ্র, এবং পশ্চিম বিভাগের হিরণপয়েন্ট খ্যাত নীলকমল অভয়ারণ্য, শেখেরটেক প্রাচীন মন্দির, সাতক্ষীরা-বুড়িগোয়ালিনীর কলাগাছিয়া ইকোট্যরিজম সেন্টার, মান্দারবাড়িয়া অভয়ারণ্য- পর্যটকদের জন্য নির্ধারিত এসব স্পটে কুমির প্রজনন, অসুস্থ হরিণের পরিচর্যা, হাজার বছরের পুরোনো স্থাপনার ধ্বংসাবশেষসহ প্রকৃতির অপরূপ সব দৃশ্য উপভোগ করা যাবে। এসব স্পটে এক থেকে পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত কাঠের তৈরি ওয়াকওয়ে ধরে বনের মাঝে হাঁটতে হাঁটতে বানর, হরিণ, গোসাপ, কাঁকড়া অথবা কুমিরের ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্যও দেখতে পারেন। টাইগার পয়েন্ট, হিরনপয়েন্ট বা বুড়িগোয়ালিনী, হারবাড়িয়া প্রভৃতি এলাকায় ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দেখাও মিলে যেতে পারে। এসব স্থানে রয়েছে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার।
দুবলার চর:
বন বিভাগের নির্ধারিত ট্যুর স্পটের বাইরে জেলেদের মৌসুমী বসতি দুবলার চরেও যান অনেক পর্যটক। শীতকালে বঙ্গোপসাগর থেকে আহরিত মাছ শুঁটকী করার দৃশ্য আর বর্ষাকালে ইলিশ মাছ ধরার মহোত্সব দেখতে পাবেন সেখানে। দেখা যাবে হাজার হাজার জেলের কঠোর জীবন সংগ্রামের চিত্রও। প্রতিবছর এখানে রাস পূর্ণিমায় বসে রাসমেলা, যা পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ। হাজার হাজার তীর্থযাত্রীর পাশাপাশি দেশি-বিদেশি বিপুলসংখ্যক পর্যটকও ভিড় করেন সেখানে। রাসমেলা পরিণত হয় লাখো মানুষের মিলনমেলায়।
খরচ:
সুন্দরবনের প্যাকেজগুলোতে জাহাজে ওঠার পর থেকে তিনদিনের টুর শেষে আবার ঘাটে ফেরা পর্যন্ত লঞ্চভাড়া, ফুয়েল, খাবার, নাস্তা, প্রত্যেকের সরকারী পাশ, রেভিনিউ, গাইড, গানম্যান, বনে ঘুরার ছোট নৌকা সহ অন্যান্য সব খরচ ইনক্লুড থাকে। অবশ্য পকেটে হিউজ পাত্তি নিয়া গেলেও সেখানে খরচ করার কোন যায়গা নাই! অনেকে ঢাকা থেকেও প্যাকেজ করে। এখানে খুলনা বা মংলা থেকে সম্ভাব্য খরচ উল্লেখ করা হল।
#খাবারের মান ও জাহাজ ভেদে মাঝারি ধরনের একটি টুরে সাধারনত খরচ পরে ৬০০০-৮০০০ টাকা।#বেশি ভালো যেতে চাইলে এর উপরে পারহেড ১৯,০০০ টাকা পর্যন্তও প্যাকেজ আছে।#আর সুন্দরবন টুরের খরচ কমানোর যে চেস্টা করছিলাম। সেই মোতাবেক স্টুডেন্টদের জন্য সুখবর হল এই যে ৩৫ থেকে ৪০ জন হলে একটি লঞ্চে ফ্লোরিং করে ৪০০০-৫০০০ টাকার মধ্যেও তিন দিনের সুন্দরবন ভ্রমন সম্ভব।
তবে ন্যাশনাল হলিডে গুলোতে খরচের কোন লিমিট নেই। আর পরাপর দুইদিন যদি ছুটি পরে তাহলেতো কোন কথাই নেই। খরচ আকাশও ছুতে পারে। আর এডভান্স দিয়ে এক দেড় মাস আগে বুকিং না দিলে খালি পাওয়াই কঠিন।
অনেকে জাহাজ ভাড়া নিয়ে নিজেরাই আয়োজন করতে চায়, হ্যা সুন্দরবনে নিজেরাও আয়োজন করা সম্ভব, কিন্তু প্যারা মহদয় আপনাকে এতটাই অতিষ্ঠ করিতে পারে যে, আপনার টুরের আনন্দ মাটি না হয়ে কাঁদায় পরিনত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here