সাইফুদ্দীন আহমেদ নান্নু :
সহজ সুযোগ হাতে থাকবার পরও ইতিহাসের কিছু সত্য ঢেকে রাখা,কিছু চরিত্রের পূর্বাপর রূপ নবীন বাঙালীর সামনে উন্মুক্ত না করা পাপ।
এটি কঠিন কোন কাজ না। গবেষণার মত ঘাম ঝরানো,সময়সাধ্য কোন ব্যাপারও না। একটি জাতীয় দৈনিক কিংবা একটি টেলিভিশন ইচ্ছে করলেই সেটা পারে ।
বেশী না প্রতিদিনের পত্রিকায় এক কলাম স্পেসে এক কিংবা দেড় হাজার শব্দের ধারাবাহিক একটি রচনা। আর টিভির পর্দায় প্রতিদিন ১০ মিনিটি করে সময় দিলেই হল। তাও মাত্র মাস দুয়েক চালালেই হবে। তাতেই মুখ থেকে মুখোশগুলো টুপটাপ খসে পড়বে। দিনের আলোর চেয়েও উজ্জ্বল আলোয় দেখা যাবে তাদের আদি বৈরী রূপ।
ডকুমেন্টের জন্য দিল্লি,পিণ্ডি, ওয়াশিংটনও ছুটতে হবে না,সব ডকুমেণ্ট ঢাকা শহরে অনেক ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের কাছে খুব যত্ন সহকারেই সংরক্ষিত আছে। সরকারের কাছেতো আছেই । সেটি আর কিছু না,জাতীয় দৈনিক এবং সাপ্তাহিক পত্রিকা। এইসব পত্রিকার সব নিউজও না। কেবল ১৯৭৫ এর ১৬ আগস্ট থেকে শুরু করে তিন মাস পর্যন্ত টেনে গেলেই চলবে।
এই সময়কালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে, আওয়ামী লীগ সম্পর্কে,১৫ আগস্টের হত্যাযজ্ঞ সম্পর্কে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের,রাজনৈতিক দলের নেতাদের, সাংবাদিক,কলাম লেখক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক,গবেষক, ইতিহাসবিদদের কে কি বলেছিলেন, কে কি মূল্যায়ন করেছিলেন,বিবৃতি দিয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড, আওয়ামীলীগকে নিয়ে কোন পত্রিকার শিরোনাম কি ছিল,কে,কোন শিরোনামে কোন কলাম লিখেছিলেন,সে সব নিয়ে পত্রিকায় ছাপা হওয়া লেখাগুলোর কেবল শিরোনাম ধারাবাহিকভাবে ছাপলে, টিভির পর্দায় দেখালেই যথেষ্ট হবে।
আর ১৫ আগস্টের মাত্র ৬ মাস আগের হিসাব টানলেতো কথাই নেই। আমরা যারা সেই সময়কে দেখেছি, শুনেছি,পত্রিকায় পড়েছি তাদের গত ৪৫ বছরের স্মৃতির খাতায় যে ধুলো জমেছে সেটা পরিষ্কার হবে আর সে সময়ে যারা শিশু,যাদের জন্ম তখনও হয়নি তাদের চোখের সামনে উন্মুক্ত হবে এক চরম বিস্ময়ের জগৎ।
নবীন বাঙালী বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে অসংখ্য নেতা,অসংখ্য বুদ্ধিজীবী,বেশ কিছু সাংবাদিক কলামিস্ট,গবেষক, শিক্ষক,ইতিহাসবিদদের সেকাল এবং একালের চেহারাটা চিনতে পারবে, চিনতে পারবে এরা কতবড় ভণ্ড, কতবড় সুবিধাবাদী,অভিনেতা।
১৫ অাগস্টের হত্যাকাণ্ডে উল্লাস করা সেই সব মুখেরা কি বিস্ময়কর বিনয়ে গত প্রায় দুই যুগ ধরে নিবেদন করে বিনম্র শ্রদ্ধা। এরা ভাবে কারও কিছু মনে নেই,সবকিছু ভুলে গেছে সবাই!
ইতিহাসের প্রয়োজনে,জাতির স্বার্থে এইসব মানুষের গিরগিটি রূপটা চেনা জরুরী।
তবে প্রশ্নটা হচ্ছে,কে চেনাবে ?
সূত্র: লেখকের ফেসবুক থেকে সংগৃহীত