নিউজবাংলা প্রতিবেদন
বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন মাওলানা মুফতি আব্দুল্লাহ ফিরোজ বলেছেন, করোনা চলে গেছে বলে খুশী হওয়া যাবে না। পাপ না ছাড়লে আরো কঠিন গজব আসতে পারে। এখন মানুষ পাপকে পাপ মনে করেনা। অপরাধকে অপরাধ মনে করেনা। মানুষের জীবন বরফের মতো। তাই আল্লার রজ্জুকে এখনই ধরতে হবে। না হলে বরফের মতো শেষ হয়ে যাবে। আখরাতের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। জীবন শুধু পেছনে পড়ে যাচ্ছে। সামনে শুধু আখেরাত।
মানিকগঞ্জ বাজার মসজিদের ইমাম মুফতি ফিরোজ বলেন, ইহুদী খ্রিষ্টানদের নজর মাদ্রাসার দিকে, মাদ্রাসা বন্ধ করতে হবে। মাদ্রাসা না থাকলে আলেম থাকবেনা। বিয়ে জানাজা পড়ানোর লোক থাকবেনা। বেইমানী তরীকায় দাফন হবে। করোনার সময়ে আলেমরা যদি এগিয়ে না আসতো তবে মৃতের দাফন হতো না। মৃত্যুর ভয়ে করোনার ভয়ে কেউ সামনে আসেনি। এমনকি সন্তানও না।
তিনি মঙ্গলবার মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে ভররা মকবুল উলুম মাদ্রাসা ও বায়তুল মামুর জামে মসজিদ কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত বার্ষিক ওয়াজ মাহফিলে প্রধান বক্তার বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমরা ব্রিটিশ আমেরিকাকে ফলো করি। অথচ তাদের বাহিরে চকচকা ভেতরে নোংরামীতে ভরা। ফেসবুক যে উদ্যেশে তৈরি করা হয়েছে সে উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। প্রতিটি ঘর সিলেমা হল হয়ে গেছে। মোবাইল না হলে শিশুরা খাবার খায়না। এরা বড় হলেতো গাজাই খাবে। মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকলে ব্রেইন কাজ করেনা। তামাক গরু ছাগলেও খায়না । অথচ সেটা মানুষ খায়। এটা ইসলামের শিক্ষা নয়। আগেকার মানুষ কুঁড়ে ঘরে থেকে দরজা খুলে ঘুমাতো। অট্টালিকায় থেকেও এখন শুধু টেনশন আর টেনশন করে মানুষ।
মাহফিলে সভাপতির বক্তৃতায় বর্ষিয়ান আলেমে দ্বীন মাওলানা মুহম্মদ ফখরুদ্দীন বলেন, মৃত্যু কখন এসে যাবে আমরা জানিনা। এক নবী খানিকক্ষণ সময় চেয়ে পাননি। হযরত সোলায়মান আ. লাঠি ভর দিয়ে দাড়ানো অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন। যেন ঘুমিয়ে ছিলেন সেভাবে লাঠি নিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় পড়ে যান। অথচ মৃত্যুকে আমরা স্মরণ করিনা। হাদীসে উল্লেখ রয়েছে যে ব্যক্তি দিনে বিশ বার মৃত্যুকে স্মরণ করে তার মৃত্যু হবে শহীদি মৃত্যু।
মওলানা ফখরুদ্দীন বলেন, ছোট মেয়েরা খেলার ছলে ঘর বানিয়ে বিভিন্ন কিছু দিয়ে পোলাও বিরিয়ানি পায়েশ রান্না করে। খেলা শেষ হলে সব ভেঙে ফেলে। দুনিয়া একদিন শেষ হয়ে যাবে। একজন নারী মাথায় টিকলি, গলায় দামি হার পড়ে, দামি শাড়ি পড়ে। মৃত্যুর পর তার শরীরে কিছুই থাকে না সব খুলে ফেলা হয়। তাই এসব আমাদের ভাবতে হবে। তিনি বলেন, কোনো মানুষ আমল দিয়ে শুধু বেহেশতে যেতে পারবে না, উসিলা লাগবে। একটা ছোট কাজও আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় হতে পারে। তাই উসিলা খুঁজতে হবে।
মসজিদ ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠাতাদের প্রতি দোয়া কামনা করে দৌলতপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড এর সদস্য সচিব শামসুর রহমান শাহীন বলেন, সকল মহতী উদ্যোগের সাথে আগেও যেমন ছিলাম আগামী দিনেও তেমনি থাকবো। এই মাহফিল শত বছরের ঐতিহ্য আগামীতে আরো সুন্দর মাহফিল হবে। মাহফিল থেকে আমরা সু নাগরিক হবার ও ভালো মুসলিম হবার শিক্ষা পাবো। তিনি শতবর্ষী মাদ্রাসার আরো উন্নয়ন ও অগ্রগতি কামনা করেন।
মাওলানা আজিজুল হক ও মাওলানা রজব আলীর পরিচালনায় বিশেষ বক্তা ছিলেন গাজীপুর জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আব্দুল ওয়াহেদী ঠাকুরকান্দি আবু হুরায়রা মাদ্রাসার মুহতামিম হাফজ মাওলানা আবাদুল্লাহ। বক্তব্য রাখেন ভররা বায়তুল মামুর মসজিদের সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ মিয়া, সিনিয়র সাংবাদিক আবদুর রহমান মল্লিক, মাওলানা ইদ্রিস হাসান প্রমুখ।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মাদ্রাসার সভাপতি শহর আলী, ইউপি সদস্য আরশেদ আলী, মাদ্রারাসা সেক্রেটারি এরশাদ আলী, সমাজসেবী জিয়াউর রহমান জিয়া ও খলিলুর রহমান, যুবনেতা রফিকুল ইসলাম দুলাল, বাবুল হোসেন, ফজলুর রহমান প্রমুখ।
মাহফিলের পূর্বে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের মাঝে হামদ-নাত ও কিরাত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। যুব সংগঠক ডা. জিএম এনামুল হকের পরিচালনায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।