রহমান মল্লিক
বর্ষা আসে প্রাণের জোয়ার নিয়ে। বৃষ্টি আর থই থই পানি মনে বিস্ময় জাগায়। প্রশ্ন জাগায় এতো পানি কোথায় ছিল। তীব্র গরমে মানুষ যখন হাসফাস করে তখন জলে সিক্ত করতে আসে বর্ষা । আশে পাশের বিশাল জলরাশি দেখে মন যেন আনন্দে নেচে ওঠে। নৌকো ট্রলার নিয়ে মানুষ ছুটে চলে উদ্দাম গতিতে। পানিতে বেড়ে যায় নানা প্রজাতির মাছেদের বিচরণ। শিশুরা ব্যস্ত হয় জলকেলিতে । আর মাছি শিকারিরা নেমে পড়ে মাছে শিকারে। বর্ষার এ নান্দনিক দৃশ্য আমাদের মন কাড়ে। আমরা হাতড়ে বেড়াই শৈশবের স্মৃতি।
বর্ষার পানি শুধু মাঠঘাট ভরিয়ে দেয়না আমাদের মনও ভরিয়ে দেয়। যাদের নৌকো আছে তারা বেড়িয়ে পড়ে বৈঠা নিয়ে । যাদের নেই তারাও বসে থাকে না। মুহূর্তে বানিয়ে ফেলে কলাগাছের ভেলা। ভেলায় চড়ারতো মজাই আলাদা । যে যার মতো করে উপভোগ করে বর্ষাকে। রাস্তাঘাট ডুবে গেলে বন্ধ হয়ে যায় চলাচল । মানুষ হয়ে পড়ে গৃহবন্ধী । এ বন্ধীদশা মানুষ মেনে নেয়, জানে কদিন পরেই নেমে যাবে এ পানি।

এই সময়ে ধরা মাছ। ছবি: পারুল হোসেন

মাছের সঙ্গে বাঙ্গালির সম্পর্ক আদিকালের শুধু নয় মজ্জাগত। এ সময় জাল আর বড়শি দিয়ে মাছধরা হয়। একটি ছোট মাছ দিয়ে বড়শিতে জিয়ালা দিয়ে রাখে বাড়ির আশে পাশে । আর অমনিতেই বড়শিতে আটকে আটকে যায় শোল বোয়াল।পানিতে প্রবল ঝাপটানির শব্দ শুনে সে মাছকে ধরে আনা হয়।

সাকিব আল হাসানের ছক্কা মারার দৃশ্য দেখার চেয়ে যেন এই দৃশ্য আরো চিত্তাকর্ষক।

ছবি সংগৃহীত

নৌকায় টেটা নিয়ে মাছ ধরার মধ্যে আছে আনন্দ, আছে বীরত্ব। ঠিক অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধে যাবার মতো। অনেকগুলো মাছ শিকার করে নিজের পারদর্শীতা আর বীরত্ব প্রমাণ করেন। যিনি নৌকা চালান তিনি কখনও ধীরে কখনও ক্ষিপ্র গতিতে নৌকা চালান। মাছ ধরার এমন অভাবনীয় দৃশ্য নজীরবিহীন। এ দৃশ্য এই বাংলার, এই জনপদের । তাই বলতে ইচ্ছে করে, মায়ের মমতায় ঘেরা দেশ / খেয়ে পড়ে আছিতো বেশ।

ছবি: সিরাজগঞ্জ এলাকার

বর্ষা আবার উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় ভরিয়ে দেয় আমাদের অনেকের জীবন। অনেকের বাড়িঘর আবার ইতো মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তাদের চোখে মুখে শুধু কালো মেঘের ছায়া। শেষ আশ্রয় থাকার ঘরটাও কেড়ে নিয়েছে ভয়াবহ বন্যা। অনাহারে অর্ধাহারে ঘরের চালে কিংবা উঁচু আশ্রয় খুঁজছে তারা। বর্ষার জলের সাথে মিশে গেছে তাদের চোখের জল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here